দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি), অন্যটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। নিহত দুজনের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও অপরজন মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দুই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরই মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দুটি ঘটনার ভিডিও থাকার পরও এখন পর্যন্ত কোনোটিতেই কাউকে আটকের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঢাবির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদকে দেখতে পান কয়েক শিক্ষার্থী। পরে তাকে কয়েক দফা পিটিয়ে প্রক্টর অফিসে নেওয়া হয়। সেখানেও কয়েক দফা মারধরের শিকার হন শামীম। পরে তাকে আশুলিয়া পুলিশের হাতে তুলে দিলে গুরুতর আহত অবস্থায় গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত শামীম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে বুধবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠাল তলি ইউনিয়নে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করে শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ওই যুবককে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। পরে রাত ১২টার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েক শিক্ষার্থী। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করলে ওই শিক্ষার্থীরা মরদেহ রেখেই সরে যান।
আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ
আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে এসব ঘটনা নিয়ে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামিম আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্র নামধারী কিছু বহিরাগত যারা সবাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সামনে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই আর একই সঙ্গে ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রশিবির
এই দুটি হত্যার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সাদেক আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং ছাত্র-জনতাকে সকল প্রকার মব জাস্টিস বা মব কিলিং বন্ধ করতে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিষ্ক্রিয়তা পরিহার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মব জাস্টিস বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।