দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার (৭ জানুয়ারি)। এ নির্বাচনে নিজ দল আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন তিন প্রতিমন্ত্রী, সভাপতিমণ্ডলীর একজন ও সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বর্তমান সংসদ সদস্য।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিন প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জন বর্তমান সংসদ সদস্য ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে পরাজিত করে চমক দেখিয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক (সুমন)। তিনি হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মাহবুব আলীকে হারিয়েছেন।
যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর কাছে হেরেছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ইয়াকুব আলী পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৪৬৮ ভোট। স্বপন ভট্টাচার্য পেয়েছেন ৭২ হাজার ৩৩২ ভোট।
ঢাকা-১৯ আসনে (সাভার ও আমিনবাজারের একাংশ) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানও ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমানের (নিক্সন চৌধুরী) কাছে টানা তৃতীয়বারের মতো হেরেছেন নৌকার প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহ।
নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে পরাজিত হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তিনি নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদারের কাছে হেরেছেন। ইফতিকার উদ্দিন পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৩ ভোট। অসীম কুমার উকিল পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৫৫০ ভোট।
মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়াকে (গোলাপ) বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) তাহমিনা বেগম। তাহমিনা পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট। সোবহান পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট।
মুন্সিগঞ্জ-৩ (মুন্সিগঞ্জ সদর-গজারিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস হেরেছেন। এই আসেন জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল (কাঁচি প্রতীক)।
বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) আওয়ামী লীগের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথকে (শম্ভু) হারিয়ে জয় পেয়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার।
মানিকগঞ্জ–২ আসনে হেরেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। তিনি এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। তাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেব।
চট্টগ্রাম–১৬ আসনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি। এ আসনে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমানকে। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলামের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে যারা ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আরও রয়েছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ। তাকে গাজীপুর-৫ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনে ভোটে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর–৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুরাদ হাসানও ভোটে পরাজিত হয়েছেন। অবশ্য এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এই আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশীদ। আবদুর রশীদ রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ।
কক্সবাজার–১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম ভোটে হেরেছেন। অবশ্য তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেনও ভোটে হেরেছেন। নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থীকে ভোটে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
কুমিল্লা–২ আসনে হেরেছেন সেলিমা আহমাদ। তাকে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল মজিদ। তিনি হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
কুমিল্লা–৩ আসনে হেরেছেন ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। এখানে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
কুমিল্লা–৪ আসনে হেরেছেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। এখানে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
কুমিল্লা–৫ আসনে হেরেছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসেম। এখানে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ জাহের। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
এ ছাড়াও এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনজন প্রতিমন্ত্রী। তারা হলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তারা ভোটে অংশ নেননি।