সাম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজ (১৭) নামের এক কিশোরকে।
ওই মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে ১৬ নম্বর আসামি হিসেবে শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির করা হয় ফাইয়াজকে। জন্মনিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস হলেও মামলার এজাহারে তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর।
হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে।
ফাইয়াজের আইনজীবী ইশতিয়াক হোসেন বলেন, “জন্মনিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট অনুসারে, ফাইয়াজের বয়স ১৭ বছর ৩ মাস ৮ দিন। যাত্রাবাড়ী থানার এ মামলায় আদালতে ফাইয়াজের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আমরা বয়সের কারণে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করি এবং এ মামলাটি শিশু আদালতে প্রেরণের অনুরোধ করি। তবে আদালত অপারগতা প্রকাশ করেন।”
ইশতিয়াক আরও বলেন, “এ পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত রিমান্ড না দিয়ে মামলাটি নথিভুক্ত রেখে বয়স প্রমাণের অন্যান্য পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে শিশু কারাগারে প্রেরণের অনুরোধ করি। আদালত এ বিষয়েও অপারগতা প্রকাশ করে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। আমি মনে করি, ফাইয়াজের ৭ দিনের রিমান্ড একটি বিতর্কিত আদেশ।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইসরাত হাসান বলেন, “কারও বয়স যদি ১৮ বছরের চেয়ে এক দিনও কম হয়, তবে ২০১৩ শিশু অধিকার আইন অনুসারে সে শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে অনুসারেই শিশু আদালতে তার বিচারপ্রক্রিয়া চলবে। এমনকি কারও বয়স যদি সার্টিফিকেট অনুসারে ১৮ হয় কিন্তু সে দাবি করে তার বয়স ১৮-র কম, তবে তার বয়সের সত্যতা যাচাইয়ের আগে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে বিচার করা যাবে না।”
ইসরাত হাসান আরও বলেন, “আজ যদি শুধু এজহারের ওপর ভিত্তি করে ফাইয়াজকে সাত দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়, তবে আদালত তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তাছাড়া এটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘননই নয়, পাশাপাশি বাংলাদেশের আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
ফাইয়াজের মামা হাসনাইন আহমেদ বলেন, “আমার ভাগিনা খুবই মেধাবী ছাত্র। ঢাকা বোর্ডে এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন একাডেমিক কোর্সেও ফাইয়াজকে ভর্তি করা হয়েছে, যেন তার এইচএসসির প্রস্তুতি একটু এগিয়ে থাকে।”
হাসনাইন আরও বলেন, “গত ২৪ জুলাই রাতে ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে সাদাপোশাকে একদল কর্মকর্তা লোকজন এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু আমরা থানায় যোগাযোগ করলে তারা জানায়, থানায় নেই। এরপর গত তিন দিন বিভিন্ন থানা ও ডিবি অফিসে আমরা তাকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পাচ্ছিলাম না। প্রতিদিন আদালতে ও বিভিন্ন থানার দ্বারে দ্বারে তাকে আমরা খুঁজতে থাকি। অবশেষে চার দিন নিখোঁজ থাকার পর আজ তাকে আদালতে তোলা হলো।”
হাসনাইন বলেন, “ফাইয়াজ কখনো কোনো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত না। তার বয়স মাত্র ১৭ বছর, কিন্তু তাকে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি করেছে। গারদ থেকে আদালতে নাওয়ার এক ফাঁকে তার সঙ্গে কথা বললাম। সে জানিয়েছে, এই কয়েক দিন তার ওপর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।”