বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও সরস্বতী পূজাকে ঘিরে প্রতি বছরই ফুলের বাজারে বেচাকেনা বাড়ে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারও ফুলের বাজারে বিক্রি বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ফুলের দামও। বসন্ত ও ভালোবাসার যুগপৎ এই উদযাপন ঘিরে বাসন্তী সাজে শাহবাগের ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় জমাতে দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, তরুণদের গায়ে রঙিন পাঞ্জাবি, তরুণীদের পরনে বাসন্তী শাড়ি, খোঁপায় গাঁদার মালা; হাতে ও গলায় তাজা ফুলের অলংকার—এ যেন বসন্ত উৎসব। কেউ ফুল কিনছেন, কেউবা ফুলের সঙ্গে নিজেকে ফোনে বন্দী করছেন। তাদের এমন আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে শাহবাগের চারপাশ।
বিউটি হাসু নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে স্বামীকে নিয়ে এসেছি ফুল কেনার জন্য। প্রতি বছর এক দিন আসে ভালোবাসা দিবস। তাই দিবসকে কোনোভাবেই মিস করতে চাই না।”
বিউটি হাসু আরও বলেন, “গতবারের চেয়ে এবার সব ফুলের দাম অনেক বেশি। প্রতি পিস গোলাপে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছি আমরা। ফুলের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে ভালোবাসা দিবস আরও বেশি জমতো।”
অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশেষ এই দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলের চাহিদা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে পাইকারি ফুল বিক্রি হয়েছে ৭০ কোটি টাকার। যার খুচরা বাজার ছিল দেড়শ কোটি টাকার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, “এবার তিন দিবসকে ঘিরে ফুলের সরবরাহ বেশি। সেই সঙ্গে বিক্রিও বেশি এবং দামও চড়া। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় ফুলের দাম একটু বেশি।”
তবে কেউ কেউ বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের বাজার কিছুটা কমতির দিকে। এমনই একজন ব্যবসায়ী বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি কম। ফুলের উৎপাদন ভালো হয়নি। কিছু কিছু বাগানে ভাইরাস ঢুকেছে। অনেক ফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে আমাদেরও সরবরাহ কম। এবার ৫ হাজার ফুল কিনেছি। গতবার ১৫ হাজার ফুল কিনেছিলাম। আমরা এবার পাইকারিতে সর্বনিম্ন গোলাপ প্রতি পিস ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা মঙ্গলবার রাতে ১৮ টাকা বিক্রি হয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, শাহবাগের বটতলা ফুল দোকানগুলোয় বর্তমানে দাম ভেদে প্রতিটি দেশি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, যা সাধারণ সময়ে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। ৪০ টাকার প্রতিটি চায়না গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। অন্য জাতের বিদেশি গোলাপ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যা সাধারণ সময়ে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা।
এছাড়া বর্তমানে প্রতিটি চন্দ্রমল্লিকা ৩০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ৪০ টাকা, জারবেরা ৩০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ২০ থেকে ৩০ টাকা, লিলি (আঁটি) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ক্যালেন্ডোলা ১০ থেকে ২০ টাকা, চায়না মাম (আঁটি) ১০০ টাকা, সবুজ মাম (আঁটি) ৮০ টাকা, জিপসি (আঁটি) ৪০ থেকে ২০০ টাকা, গাঁদার লতা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ সময়ে প্রতিটি চন্দ্রমল্লিকা ৫ থেকে ১০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ২০ টাকা, জারবেরা ১৫ থেকে ২০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১০ থেকে ১৫ টাকা, লিলি (আঁটি) ৩০০ টাকা, ক্যালেন্ডোলা ৫ থেকে ১০ টাকা, চায়না মাম (আঁটি) ৫০ টাকা, সবুজ মাম (আঁটি) ৫০ টাকা, জিপসি (আঁটি) ১০ থেকে ৫০ টাকা, গাঁদার লতা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফুল ছাড়াও বর্তমানে বেলির মালা প্রতিটি ২০ টাকা, মাথার রিং ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকার গাজরা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেগুলো সাধারণ সময়ে যথাক্রমে ২০ টাকা, ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। অর্থাৎ বিশেষ দিবস ঘিরে ফুলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুলের তোড়া ফুল ও আকার অনুযায়ী ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ সময়ে এই ফুলের তোড়ার দামও কম থাকে।