• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাহসী-বিতর্কমুক্ত ব্যক্তিকে ইসিতে চান বিশিষ্টজনরা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২, ০৮:০৮ পিএম
সাহসী-বিতর্কমুক্ত ব্যক্তিকে ইসিতে চান বিশিষ্টজনরা
ছবি: সংগৃহীত

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রস্তাবিত নামে যেন কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে না রাখা হয় সে অনুরোধও করা হয়েছে বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে।

পাশাপাশি সাহসী, নির্লোভ ও বিতর্কমুক্ত ব্যক্তিদের বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্টজনদের দুটি বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

এদিন বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয় বৈঠকের প্রথম সেশন। প্রথম সেশনে ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তাতে ১৪ বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। পরে বৈঠক শেষ হয় ১২টা ৩৭ মিনিটে।

এরপর দ্বিতীয় সেশনের বৈঠক শুরু হয় দুপুর ১টা ৫ মিনিটে। ওই সেশনে ১১ জন নাগরিক অংশ নেন। বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৩টার দিকে।

দ্বিতীয় বৈঠক শেষে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘‘আজ দুটি গ্রুপের সঙ্গে তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। প্রথম গ্রুপে ১৪ জন। আর পরের গ্রুপে ১১ জনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওনারা বেশ কিছু সাজেশন দিয়েছেন। সবার মূল বক্তব্য হলো, এমন একটা ইলেকশন কমিশন নির্বাচন করা, যাতে সবার আস্থাভাজন হয়। ভালো একটা নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য তারা পদক্ষেপ নিতে পারেন। সেটাই মূল বক্তব্য ছিল।”

এখন সার্চ কমিটির পদক্ষেপ কী হবে- এমন প্রশ্নে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “এগুলো সার্চ কমিটি সব নোট করেছে। আগামীকাল বিকেল ৪টার পর এ রকম আরেকটি মিটিং হবে। ওই মিটিংয়ের সার্চ কমিটি বসে তাদের সাজেশনগুলো নিয়ে কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে।’’

এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, তারা ৩২৯টি নাম পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এমনও হতে পারে, একজনের নাম চারবার-পাঁচবার এসেছে। সেগুলো সর্ট আউট করলেই আক্যচুয়ালি কতজন ভ্যালিড হয় সেটা বোঝা যাবে। পরে গুনে নাম পাওয়া যায় ৩০৯টি।”

এছাড়া বিশিষ্টজনরা জমা পড়া নাম প্রকাশ্যে আনতে বলেছেন। সে বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “এটা সাজেশন। সার্চ কমিটির সদস্যরা যখন বসবেন, ওনারা ওনাদের কার্যপদ্ধতি ঠিক করবেন।”

প্রথম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা সবাই কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের সবারই বক্তব্য ছিল, নির্বাচন কমিশনে যারা সুযোগ পাবেন তারা যেন পূর্বে কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন।”
 
এছাড়া রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত কেউ যেন নির্বাচন কমিশনে সুযোগ না পান সেই বিষয়টি সার্চ কমিটিকে জানানো হয়েছে বলে জানান ড. আসিফ।

দ্বিতীয় সেশনে অংশ নিয়ে সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, ‘‘আমরা প্রথম যে জিনিসটি চেয়েছি আইনের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। এই সার্চ কমিটির সব সদস্য সম্মানিত এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে। আমরা চেয়েছি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম যাবে একটা সাংবিধানিক বাধ্যকতা রয়েছে উনি এই ১০ জনের নামের বাইরে যেতে পারবেন না। এর মধ্যে থেকে যেকোনো পাঁচজনকে নিযুক্ত করবেন। কিন্তু সারা বাংলাদেশে যে যোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করা দায়িত্ব তাদের। অবশ্যই তারা যেন যোগ্যতা সম্পন্ন হয়, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হয় এবং তাদের লাইফে যেন কোনো ধরনের ক্রেডিবিলিটি গ্যাপ না থাকে। যাচাই- বাছাই করে তাদের নাম যেন রাষ্ট্রপিতির কাছে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত যাদের নাম আসছে তাদের নাম যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তারা যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করবে, সেগুলোও যেন গণমাধ্যমে আসে।

যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘‘আলোচনায় আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম দেবে, সে ১০ জন কর্মে ও যোগ্যতায়, পাশাপাশি তারা যেন সাহসী হোন এবং নির্লোভ ব্যক্তি হোন। আমরা বলেছি যাতে অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থার জায়গায় আছেন—এমন ১০ জনের নাম দেওয়া হোক। এমন কিছু করা না হোক, যাতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর সেখানে আমরা নির্বাচন বিষয়ের বাইরে অন্য বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখি। যেমনি আমাদের নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্বাসে ঘুণ ধরেছে, সে জায়গাটা যেন আর ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়।’’

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘‘আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। কিন্তু এই কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুরা। কমিশনে তাদের প্রতিনিধি যেন রাখা হয়।’’

আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া উচিত। তাদের নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি।’’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “আমরা আগে পাঁচটা নাম দিয়েছিলাম। সাখাওয়াত প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আর্মির চিফ ইকবাল করিম ভূইয়া, আমাদের প্রথম মহিলা বিচারপতি নাজমুন আরা, বদিউল আলম মজুমদার এবং সুলতানা কামাল। তাছাড়া আমি বলেছি, যেহেতু ১০টি নাম সেকারণে আমি আরও তিনটা নাম বিবেচনায় নিতে বলেছি। একজন হল প্রাক্তন আইন সচিব কাজী হাবিুবুর আউয়াল।” 

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, “যদিও বিএনপি আর কিছু রাজনৈতিক দল আসছে না, তাদের আবারও চেষ্টা করার জন্য। আমার মতে, তাদের সরকার পতনের আন্দোলন সেটা তারা করতেই থাকুক। তাহলেও তো একটা নির্বাচন লাগবে।” 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইসি নিয়োগের জন্য মোট ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীর সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। আলাপ-আলোচনা শেষে যোগ্যতাসম্পন্ন ১০ ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে সুপারিশ করবে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওই ১০টি নাম থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্প্রতি একটি আইন পাশ করেছে জাতীয় সংসদ। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে। 

এছাড়া কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়ায়দুল হাসান।

Link copied!