নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্য নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন আইনসহ পাঁচ প্রস্তাব করেছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার কথাও জানায় দলটি।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে এসব কথা জানান দলটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হাই মণ্ডল।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, “নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিতে নিরপেক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের নেওয়ার কথা বলেছি।”
কোনো নাম প্রস্তাব করেছেন কিনা জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা কোনো নাম প্রস্তাব করিনি। আমরা বললে দলীয় বলতে পারে।”
ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকের বিষয়ে শেখ ছালাউদ্দিন বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে। তাই দলীয় প্রতীক না দেওয়ার কথা বলেছি। রাষ্ট্রপতিও এই বিষয়টিতে একমত হয়েছেন।”
নির্বাচন কমিশন আইন না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আইনের কথা আমরা বলেছি। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটা আইন হয়নি এটা আমাদের একধরনের ব্যর্থতা।”
নির্বাচন কমিশন গঠন ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া দলটির পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মো. আবদুল হাই মণ্ডল। পাঁচ প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-
১. নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত একটি আইন করার যে নির্দেশনা সংবিধানে আছে, সে অনুযায়ী গত ৫০ বছরেও কোনো স্থায়ী আইন করা হয়নি। এজন্য দেশ ও জাতির স্বার্থে অবাধ, সুষ্ঠু, অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সব দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি স্থায়ী আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করছি।
২. নির্দলীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত না হলে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার সুপারিশ করছি।
৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, দক্ষ, সৎ ও নিরপেক্ষ নির্দলীয় ব্যাক্তিবর্গের সমন্বয়ে সংবিধান মতে নির্বাচন কমিশন গঠন এবং বিশ্বের অন্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও যেন নির্বাচন কমিশন বাস্তবেই স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য আমরা মনে করি, আপনি (রাষ্ট্রপতি) দেশের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাভাজন ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিভাবক। দেশের সব ব্যক্তি বিশেষ করে মেধাবী সৎ ও ন্যায়-পরায়ণ দক্ষ ব্যক্তিদের নাম আমাদের চাইতেও আপনি ভালো জানেন এবং চেনেন। তাই ন্যাশনাল পিপলস পার্টি আপনার ওপর আস্থাশীল। আমরা মনে করি, আপনার প্রস্তাব আমাদের প্রস্তাব।
৫. অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। তাই বর্তমান বাস্তবতায় সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করছি।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে প্রবেশ করে।
এতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ প্রেসিডিয়াম সদস্য মিসেস খালেকুজ্জামান খান দুদু, মো. ইদ্রিস চৌধুরী, মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান, আশা সিদ্দিকা, সৈয়দ মাহমুদুল হক প্রমুখ ছিলেন।