রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, “দেশে বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সরকার আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়। বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে।”
মামলার পরিমাণ দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তা আয়ত্তের মধ্যে আনতে হলে বিচারকদের আরও বেশি কাজ করতে হবে। সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বলেও জানান তিনি।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই নির্দেশনা দেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “দেশের সব আদালতের কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির সব সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।”
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ২০২০ সালের ৯ মে আদালতের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। যা পরবর্তীতে আইনে পরিণত হয়।”
এছাড়া আবদুল হামিদ বলেন, “মহামারি করোনাকালে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের বিচারক ও আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য আমি বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সংবিধানকে নানাভাবে কাটা-ছেঁড়া করে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জনতার প্রতিরোধের মুখে স্বৈরশাসকদের পতন হয়েছে। স্বৈরশাসকেরা তাদের পতনের পূর্বে অবৈধভাবে সংসদকে ব্যবহার করে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তাদের সমস্ত কুকীর্তিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের সেই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।”
আবদুল হামিদ আরও বলেন, “জাতির ক্রান্তিকালে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে রক্ষা করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট দিবসের অনুষ্ঠানে আমি কৃতজ্ঞতাসহ স্মরণ করছি সুপ্রিম কোর্টের সেই অকুতোভয় বিচারপতিদের, যারা বন্দুকের নলের কাছে নতি স্বীকার করেননি। তাদের বিবেককে কখনো বিকিয়ে দেননি। এছাড়া বিজ্ঞ আইনজীবীদের ভূমিকাও আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।”
এ সময় বিচার ব্যবস্থায় আইনজীবীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, “আইনজীবীরা বিচার ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ। বিচার কাজে আইনজীবীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময় যেমন দেশের প্রথিতযশা আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তেমনি যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই আদালতের ডাকে সাড়া দিয়ে এমিকাস কিউরি হিসেবে তাদের মতামত দিয়ে আদালতকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছেন।”
এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং জাজেস কমিটির সভাপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।