বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের চতুর্থ ও দেশের ৫১তম জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। এবারের বাজেট বক্তৃতা প্রণয়ন করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট বক্তৃতার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অভিঘাতে চরম অনিশ্চয়তায় বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর বাইরে নেই বাংলাদেশও।
বৈশ্বিক এ সংকট মোকাবিলায় বাজেটে বিনিয়োগকে প্রাধান্য দিয়ে কর, শুল্ক ও ভ্যাটে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। স্থানীয় শিল্পের উৎপাদকদের জন্য থাকছে করপোরেট করে ছাড়, আমদানি পর্যায়ে আগাম কর থেকে অব্যাহতির মতো সুখবর। বাজেটে এবার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সাশ্রয়ী হতে বিলাসপণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার বা মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের মোট আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই আইসিটি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্টার্ট-আপ উদ্যোগকে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হবে। বাজেটে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল ছাড়া অন্য সব ধরনের রিপোর্টিংয়ের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্টার্ট-আপ কোম্পানির লোকসান ৯ বছর পর্যন্ত সমন্বয়ের প্রস্তাব থাকছে। এছাড়া স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয়সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও টার্নওভার কর দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।
এছাড়া বাজেটে মোটরগাড়ি উৎপাদন শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান ফ্রিজ, এসি, টিভি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, মোবাইল সংযোজন, লিফট সংযোজন শিল্পে এ সুবিধা দেওয়া আছে। তবে ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হওয়ায় বাজেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে করপোরেট করহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকা। এ ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ২০ ও ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোড করতে হবে। তা না হলে করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে না। আর তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির যাবতীয় লেনদেন ব্যাংক অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। অন্য সব খাতে করপোরেট কর অপরিবর্তিত থাকছে। বিনিয়োগ বেড়ে নতুন করদাতা সৃষ্টি হলে মোট রাজস্বে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে এনবিআর। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিও সরকারের লক্ষ্য।
এদিকে উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে সরকার উৎপাদকদের কাঁচামাল সরবরাহের ওপর উৎসে কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়িক পণ্য সরবরাহের ওপর উৎসে করহার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সরকারি বই ছাড়া অন্য বই সরবরাহের ওপর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হবে।