• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক বেশে ১৭ বছর 


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২, ০৭:৪৭ পিএম
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক বেশে ১৭ বছর 

স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে প্রায় দেড় যুগ পর গ্রেপ্তার করতে পেরেছে র‌্যাব। মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭) নামের ওই আসামি ১৭ বছর ধরে সাংবাদিক ছদ্মবেশে পলাতক ছিলেন।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার সাভারে অভিযান চালিয়ে কামালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানা থেকে একটি অধিযাচন পত্রে (রিকুইজিশন লেটার) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামালকে গ্রেপ্তারের জন্য র‌্যাবের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কামালের ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত ও তাকে গ্রেপ্তার করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে নারায়ণগঞ্জে নিজের শিশুপুত্রের সামনে শ্বাসরোধে স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে হত্যা করেন কামাল। বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে লাশ সিলিংফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজান তিনি। এমনকি এ সংক্রান্ত অপমৃত্যুর মামলাও করেন তিনি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহ হওয়ায় কামালকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে শ্বশুরের সহায়তায় জামিন নিয়ে হঠাৎ আত্মগোপনে চলে যান তিনি। আত্মগোপনে থাকার সময় কখনোই নিজের স্থায়ী ঠিকানা, কর্মস্থল, সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগযোগ রাখেননি কামাল।

“এদিকে ময়নাদতন্তের প্রতিবেদন এলে জানা যায় সানজিদাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পরে পুলিশ এই ঘটনায় কামালকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় নারায়ণগঞ্জের আদালত কামলাকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির রায় দেন” যোগ করেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, কামালের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। তিনি ১৯৯৮ সালে বি.কম পাস করেন। ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি প্রতিষ্ঠিত সিমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন তিনি। ২০০৩ সালে তিনি সানজিদাকে বিয়ে করে কোম্পানির স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রীকে হত্যার পর তিনি ছদ্মবেশে আশুলিয়ায় বসবাস শুরু করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে নেন সাংবাদিকের ছদ্মবেশ। ওইখানেই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

র‌্যাব আরও জানায়, কামাল আশুলিয়ায় বসবাস শুরুর পর ২০০৬ সালে সাপ্তাহিক মহানগর বার্তার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সালে তিনি আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তীকালে সংবাদ প্রতিক্ষণ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ২০১৩-১৪ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয়লাভও করেন। ২০১৫-১৬ মেয়াদে তিনি আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সহ-সম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি এই প্রেসক্লাবের ২০১৬-১৭ মেয়াদে নির্বাহী সদস্য পদ লাভ করেন। এছাড়া ২০২০ সালে দৈনিক সময়ের বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। ২০২১-২২ মেয়াদেও তিনি আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন এবং হেরে যান। বর্তমানে তিনি আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য এবং স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলেন।

এই দীর্ঘ সময়ে তিনি সংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন গার্মেন্টস ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। নিজে ‘কপ্লিয়েন্স সলিউশন’ নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম খোলেন। ফার্মটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ যাচাইয়ের নিরীক্ষার পরামর্শের কাজ করত বলে জানায় র‌্যাব।

Link copied!