রাজধানীতে অবৈধভাবে দখল হওয়া সমস্ত খাল উদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। উদ্ধারকৃত খালসমূহ সংস্কার করা হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি নগরবাসীকে একটি আধুনিক-দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য নগর উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরে এখনও ৫৩টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। এসব খাল উদ্ধার করে যদি নৌ চলাচল ও দুই পাশে ওয়াক ওয়ে নির্মাণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন করা যায়, তাহলে মানুষ ভেনিস ঘুরতে না গিয়ে, ঢাকা শহরে আসবে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় রামচন্দ্রপুর খালের অবৈধ স্থাপনা উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, “যারা সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর ফলে সব জায়গায় একটি বার্তা চলে যাবে যে, অবৈধভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করে রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই।”
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, “শুধু এখানকার খাল উদ্ধার হবে আর অন্যগুলো হবে না, এমনটা ভাবা উচিত হবে না। ঢাকা শহরের যত জায়গা দখল করে অবৈধ নির্মাণ করেছেন বা করার পাঁয়তারা করছেন, তারা সতর্ক হবেন। কোনো দখলবাজদের বরদাস্ত করা হবে না। জনগণের কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবকিছু করবে সরকার।”
মন্ত্রী জানান, রাজধানীর সকল খাল একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ তৈরি করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে একাধিক সভা করে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। ঢাকা শহরের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আরো বলেন, “জনপ্রতিনিধির হাতে দায়িত্ব দিলে খাল উদ্ধার করা সহজ হবে। কারণ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জনগণ থাকে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করলে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। সে উদ্দেশ্যেই রাজধানীর কিছু খাল ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দুই সিটি করপোরেশন জোরালো অভিযান চালিয়ে খাল উদ্ধার কাজ শুরু করেছে, যার ফলাফল এখন দৃশ্যমান।
“জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য দুই মেয়র আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।” তাদের সঙ্গে সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, “কয়েকজন মানুষের জন্য রাজধানীর দুই কোটি মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হতে পারে না। আর এটা কখনোই করতে দেওয়া হবে না।”
রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে ট্রাক ও বাস স্ট্যান্ড নির্মাণ করার কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে যে পরিমাণ রাস্তার দরকার তা নির্মাণ করতে হবে। আবাসনের জায়গায় আবাসন হবে। সবার জন্য কল্যাণকর ঢাকা গড়তে যা যা দরকার, তার সবই করতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।”
রাজধানীর অন্য খালগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, “ওয়াটার বোর্ডের অধীনে থাকা খালগুলো হস্তান্তরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন থাকা খালগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
মন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর অনেক সিটি করপোরেশন নিজেদের অর্থায়নে এয়ারপোর্ট, সাবওয়ে, ট্যানেল এবং মেট্রোরেল করেছে। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো আগের তুলনায় অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমি বিশ্বাস করি, খুব অচিরেই দেশের সকল সিটি করপোরেশন আত্মনির্ভরশীল হবে।”
পরিদর্শনকালে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, নগর স্থপতি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।