যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত, সে দেশের অর্থনীতি ততটাই গতিশীল। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সেপ্রেসওয়েতে গেলেই মিলবে এই কথার প্রমাণ। আগে যেখানে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগতো আড়াই ঘণ্টা, সেখানে এখন সময় লাগে এক ঘণ্টারও কম।
দেশের প্রথম এই এক্সেপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের নভেম্বরে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণ শেষে ২০২০ সালের মার্চে সড়কটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে দ্রুতগতির যানবাহনগুলোর সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ও নান্দনিক সৌন্দর্য্যের এই এক্সেপ্রেসওয়ের মাঝে রয়েছে পদ্মা সেতু। যেটি এখনো নির্মাণাধীন। ফলে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটিতে এখনই একটানা যান চলাচল করতে পারে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার গিয়ে ফেরিতে পাড়ি দিতে হয় পদ্মা নদী। এরপর শরিয়তপুরের জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথ। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই এক্সেপ্রেসওয়ের পুরো সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এক্সপ্রেসওয়েতে এখনো একটানা যান চলাচল শুরু না হলেও এরই মধ্যে এতে ছুটে চলা উপভোগ করছেন ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকরা। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এই সড়কের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। তারা বলছেন, এই এক্সেপ্রেসওয়ের কারণে উন্নত বিশ্বের মতোই নিরবিচ্ছিন্ন হবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের জন্য রয়েছে পাঁচটি ফ্লাইওভার। যার একটি বাবুবাজার থেকে কদমতলী পর্যন্ত। অন্য চারটির হলো—আবদুল্লাহপুরে, শ্রীনগরে, পুলিয়াবাজারে এবং বাকি একটি মালিগ্রামে। এছাড়া রেলওয়ে ওভারব্রিজ রয়েছে চারটি। সেগুলোর একটি জুরাইনে, একটি কুচিয়ামোড়া এলাকায়, একটি শ্রীনগরে এবং অন্যটি আতাদিতে।
দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়েতে চারটি নদীর ওপর বড় চারটি সেতু রয়েছে। সেতুগুলো হলো— ধলেশ্বরী-১, ধলেশ্বরী-২, আড়িয়াল খাঁ সেতু, কুমার সেতু। এর বাইরেও ছোট সেতু ও কালভার্ট রয়েছে আরো ২৫টি।
সাধারণত এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন থামার সুযোগ না থাকলেও, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েতে রয়েছে কয়েকটি বাস থামার স্থান (বে)। যেখানে যাত্রীবাহী বাস থামার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তেই রয়েছে টোল প্লাজা। দুর্ঘটনা এড়াতে রয়েছে দুটি আলাদা সার্ভিস লেন এবং মাঝ বরাবর ৫ মিটার প্রশস্ত মিডিয়ান।