প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আজ ১৬ ডিসেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।”
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শপথবাক্য পাঠ করানোর আগে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেদিনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে, এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেনি। তাই বাঙালিদের ওপর শুরু করে নিপীড়ন-নির্যাতন। এরপর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এ সময় যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন বঙ্গবন্ধু। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বাংলাদেশের জনগণ তার নির্দেশ সেদিন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।”
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’ এদিকে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। আগে থেকেই ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী তার তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন।”
সরকারপ্রধান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর এই বার্তা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়। থানায় কর্মরত অফিসাররা তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোররাতে পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত সেই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন। ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্য নেতারা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওই দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রচারিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে শুরু করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্য বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সেসব দেশের জনগণ। মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের এই বিজয়।”
এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, বিশ্বসভায় উন্নত-সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এখন শপথ গ্রহণ করব। প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমি এখন শপথবাক্য পাঠ করবো। আপনাদের আমার সঙ্গে কণ্ঠ মেলানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এরপরই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। কিছুক্ষণ পরেই জাতীকে শপথ করাতে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
বিকাল পৌনে ৫টায় প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সারা দেশের সঙ্গে যুক্ত থেকে শপথবাক্য পাঠ করান। দেশের সব বিভাগ/জেলা/উপজেলা স্টেডিয়াম/মহান বিজয় দিবসের নির্ধারিত ভেন্যু থেকে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শিরোনামে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
এতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ উপস্থিত ছিলেন।
