বগুড়ার গাবতলীতে নৈশপ্রহরীদের হাত-মুখ বেঁধে তিনটি মার্কেটে ডাকাতির ঘটনায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাতিই ছিল এই দলটির সদস্যদের মূল পেশা।
সোমবার (২২ নভেম্বর) বেলা ১২টায় কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এই ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১২।
গ্রেপ্তাররা হলেন— ডাকাত দলের নেতা মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫) এবং তার সহযোগী মো. আব্দুল হালিম মিয়া জুয়েল (২৮), আলী হোসেন (৫৬), মো. সুমন মুন্সি (২০) ও মো. হুমায়ুন কবির (৩৫)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ম্যাগাজিনসহ একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি বোল্ট কাটার, দুইটি রামদা, তিনটি শাবল, দুইটি ছুরি, একটি কাঁচি, ১০টি লাঠি, একটি হাতুড়ি, একটি টর্চ লাইট, একটি ট্রাক জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় বগুড়ার গাবতলীর মার্কেট থেকে লুট করা তিনটি স্বর্ণের চেইন, তিন জোড়া কানের দুল, একটি বড় আংটি, একটি ছোট আংটি, তিন জোড়া হাতের চুড়ি, ৬২টি থ্রি-পিস, ১৪১ পিস শাড়ি, ৮৫ পিস গেঞ্জি, নয় পিস প্যান্ট, পাঁচ পিস ধুতি, ১০টি ট্রাউজার ও ১০টি ব্যাগ।
র্যাব জানায়, ৬ নভেম্বর রাতে বগুড়ার গাবতলী থানার দুর্গাহাটা বাজারে নৈশ প্রহরীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুন্সি সুপার মার্কেট, পুকুর পাড় মার্কেট ও মসজিদ মার্কেটে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। এ সময় তারা নয়টি দোকানের তালা কেটে স্বর্ণালঙ্কার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, জামাকাপড় ও মোবাইলসহ প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল এবং নগদ টাকা লুট করে। এই ঘটনায় পরদিন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গাবতলী থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা।
র্যাব আরো জানায়, ঘটনার তদন্তে নেমে দেখা যায়, এই সংঘবদ্ধ দলটি দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। তারা নিয়মিত বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় ডাকাতি করত। পরে গাবতলী মার্কেটে ডাকাতির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও নৈশপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই দলের অবস্থান শনাক্ত ও দলনেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গাবতলীর ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছে, বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাতিই ছিল তাদের মূল পেশা। তাদের দলে ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো জানান, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তারা ট্রাকের চালকের আসনের নিচে লুকিয়ে পরিবহন করে। বগুড়ার গাবতলীর দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির আগে গ্রেপ্তার হালিম ও সুমন সেখানে রেকি করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেলোয়ার ও কবির ডাকাতির বিস্তারিত পরিকল্পনা করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো জানান, দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতির আগের দিন বিকেলে সাভারের নবীনগরে একত্রিত হয়ে ট্রাকে করে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেয় ডাকাত দলের ৯ সদস্য। যাত্রাপথে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় আরো তিনজন। মোট ১২ জনের এই দলটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে দূর্গাহাটা বাজারে ডাকাতি সম্পন্ন করে। একদল মার্কেটে পাহারা দেওয়া নৈশ প্রহরীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে এবং আরেক দল দোকানগুলো থেকে মালামাল লুট করে। পরে ডাকাতি শেষে তারা সাভারের নবীনগরে এসে লুট করা মালামাল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয় এবং গার্মেন্টসের কাপড় ও স্বর্ণালঙ্কার মার্কেটে বিক্রি করে দেয়।
র্যাব আরো জানায়, এই ডাকাত দলের সরদার দেলোয়ার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তিনি ৬-৭ বছর ধরে ডাকাতি করছে। ডাকাতির আগে সে দলের অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং পরিকল্পনা করে ডাকাতি করে। তার নামে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, চুরি ও মাদকের চারটি মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তার হুমায়ুন কবির ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাকটি সরবরাহ করে। চুরির উদ্দেশ্যেই তিনি এই ট্রাক চুরি করেছেন এবং আগেও এটি ডাকাতির কাজে ব্যবহার করেছেন। তার নামেও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বগুড়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া এই দলের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার ও লুটকৃত মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।