বিদেশ পাঠানোর নামে স্বল্প আয়ের মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। চক্রটি গত দুই বছরে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে এভাবে প্রতারিত করেছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর বারিধারায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রটির মূল হোতা মো. সুজন শেখ ও তার সহযোগী মো. আমিনুল ইসলাম রনিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ এর আভিযানিক দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৩৮টি পাসপোর্ট, তিনটি মোবাইল ফোন, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রবাসে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির স্বার্থন্বেষী সংঘবদ্ধ চক্র নিরীহ সাধারণ মানুষদের কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে প্রতারিত করছে। ভুক্তভোগিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এই চক্রটিতে ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে। এরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ময়মনসিংহ ও মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় রয়েছে। গত দুই বছর যাবত তারা বিদেশে লোক পাঠানোর নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এখন পর্যন্ত চক্রটি তিন শতাধিক নিরীহ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
র্যাবের এই পরিচালক আরো জানান, চক্রটি সাধারণত গার্মেন্টস ও কারখানার কর্মী, ড্রাইভার, সিএনসি চালক, গৃহকর্মীসহ স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। তাদের বিদেশে দুই-তিনগুণ বেশি বেতনে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিত। পাশাপাশি স্বল্প খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেখাত। এতেই প্রলোভনের শিকার হয়ে কষ্ট করে উপার্জিত অর্থ খোয়াত সাধারণ মানুষ।
খন্দকার আল মঈন আরো জানান, চক্রটি ভুক্তভোগীদের দেশ ভেদে আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাগবে বলে জানাত। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে এক থেকে দুই লাখ টাকা নিত এবং বাকি টাকা ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিত। প্রাথমিকভাবে ধার্য করা টাকা পেলে গেলে গড়িমসি শুরু করত চক্রটি। বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কথা বলে চাপ প্রয়োগ করত বাকি অর্থ পরিশোধের। সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করা ব্যক্তিদের তারা ভুয়া পাসপোর্ট ও টিকিট দিয়ে বিমানবন্দর এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দিত।
র্যাব আরো জানায়, চক্রটি বিভিন্ন জায়গায় সাবলেটে অফিস ভাড়া নিত। এতে তাদের অফিস ভাড়া কম খরচ হতো এবং সহজেই অফিস পরিবর্তন করতে পারত। তারা প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বা বায়ারের ওয়েব সাইট দেখে বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটিং কোম্পানির নাম ব্যবহার করত। সেই নামের ভিজিটিং কার্ড, স্টাম্প ও অন্যান্য নথিপত্র বিদেশ গমন ইচ্ছুকদের প্রদর্শন করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করত। এমনকি প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ভুয়া টিকেট, ভিসা, ভ্যাকসিন কার্ড, বিএমইটি কার্ড তৈরি করে প্রতারণা করত। প্রতারণা শেষে সঙ্গে সঙ্গে অফিসও পরিবর্তন করে ফেলত বলে জানায় গ্রেপ্তারকৃতরা।
র্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সুজন প্রায় ১৫ বছর গুলশান, বনানী, মালিবাগ, কাকরাইলের বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি ও দালালি করেছে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কৌশল রপ্ত করেছে সে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আমিনুল ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ছিল। তিনিও নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে এই প্রতারণা করতেন। যার কারণে নিরীহ মানুষরাও সহজে তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ত।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায় র্যাব।