ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ায় যারা স্বস্তিতে ছিলেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ। অবৈধভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি) চলা বাসের ভাড়াও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর সব রুটের বাসে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, ঢাকার ৯৫ শতাংশ বাস সিএনজিতে চলে। এ শহরের চলাচল করা মোটা বাসের সংখ্যা ১২ হাজার পাঁচ ‘শ ২৬টি। এরমধ্যে ১১ হাজার তিন ‘শ বাস চলে সিএনজিতে। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ শতাংশ বাস ডিজেলে চলে। অন্যদিকে সারাদেশে চলা বাসের মধ্যে ৪৫ শতাংশ চলে ডিজেলে। বাকি ৫৫ শতাংশ চলে সিএনজিতে। তবে এখন বলা হচ্ছে, রাজধানীর সব বাসই ডিজেল চালিত! এ নিয়ে বাসের হেলপারদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন অনেক যাত্রী।
প্রতিদিন মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজার অফিস করেন আলমগীর হোসেন। এতদিন তিনি স্বাধীন বাসে ভাড়া দিয়ে আসছেন ১০ টাকা করে। আজ সোমবার তাকে বাড়তি পাঁচ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। বাসটি সিএনজিতে চললেও বলা হচ্ছে ডিজেলে চলে। এ নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় তার।
এ সময় আলমগীর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। সবকিছুর দাম বেড়ে চলেছে। বলা হয়েছে, ডিজেলচালিত গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে, অথচ গড়ে সব বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখনই উচিত সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া। যারা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। রোড পারমিট বাতিল করা হোক।”
কারওয়ান বাজারের এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডা আগে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা এখন সেটা করা হয়েছে ২০ টাকা। হাতিরঝিল চক্রাকার বাসগুলো সিএনজিচালিত হলেও সেগুলোর ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিজেলচালিত বাসের বাসের মতো প্রতি স্টপেজ বাড়তি ৫ টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে। হাতিরঝিল এলাকা চক্রাকারে ঘুরতে আগে ৩০ টাকা লাগলেও এখন লাগছে ৪০ টাকা।
অযৌক্তিভাবে ভাড়া বৃদ্ধি করায় ক্ষুদ্ধ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, “কঠিন সময় পার করছি আমরা। এই যে, তিন দিন ধর্মঘট ডাকা হলো, এটা ছিল স্রেফ ভাড়া বাড়ানোর জন্য। ডিজেলের দাম কমানোর জন্য নয়। যখন বলা হলো, শুধু ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়বে তখন বোঝা উচিত ছিল এই সূত্রে সব বাসের ভাড়া বেড়ে যাবে। এদেশে কোনোকিছুর দাম বাড়লে সেটা কমে না। বাস ভাড়া যে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটাও কমবে না। ডিজেল-সিএনজিচালিত সব বাসেই বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে। আসলে আমরা সাধারণ মানুষ খুব অসহায়। কিছু করার নেই। সহ্য করে যেতে হবে।”
এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহর দাবি, রাজধানীতে মাত্র ১০ শতাংশ বাস সিএনজিতে চলে। বাকি ৯০ শতাংশ ডিজেলে। তবে সিএনজিচালিত যেসব বাস বেশি ভাড়া নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদপ্র প্রকাশকে এনায়েত উল্যাহ বলেন, “যেসব পরিবহন ভাড়া বেশি নিচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। গতকালকে মাত্র সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজকে আমরা আলোচনায় বসব, যারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিআরটিএর সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “গণপরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আমরা কেবলমাত্র ডিজেলচালিত গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করেছি। যারা অবৈধভাবে সিএনজিচালিত বাসের বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। পরিবহন সমিতির সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলব।”
অন্যদিকে সরকারকে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাস আলাদা করে চিহ্নি করার তাগিদ দিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারি অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ। তিনি বলেন, “প্রথমত বাস ভাড়া বাড়ানো ঠিক হয়নি। যেহেতু ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সেহেতু সরকারের তরফ থেকে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসগুলো চিহ্নি করতে হবে। নতুনবা সাধারণ মানুষই এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”
গত বুধবার হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপরই শুক্রবার থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে ধর্মঘট শুরু হয়। একই সঙ্গে ডিজেলের দাম কমানো কিংবা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে নামে পণ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-মালিকরা।
এর প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাস মালিকদের সভায় বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা হচ্ছে। আর মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ৫ পয়সা। আর এই হিসাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই বাড়তি ভাড়া শুধুমাত্র ডিজেলচালিত গণপরিবহনগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।