• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বার্তা না পাওয়া ও অনিবন্ধিত সকলেই পাচ্ছেন টিকা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১, ০৭:০৮ পিএম
বার্তা না পাওয়া ও অনিবন্ধিত সকলেই পাচ্ছেন টিকা

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন রোগী। স্বজন হারাচ্ছেন কেউ না কেউ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি শুরু হয়েছে গণটিকাদান কার্যক্রম।

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার প্রায় ১১ মাস পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে টিকা দেওয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে শুধু ইন্টারনেটের মাধ্যমে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষরা ইন্টারনেটের ব্যবহার না জানায়, তাদের জন্য আলাদাভাবে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আবার অনেকে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার পরও এসএমএস না পাওয়ায় টিকা নিতে পারছিলেন না। তাদের জন্যও চলমান গণটিকাদান কর্মসূচিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

চলুন জেনে নেয়া যাক কে কোথায় কিভাবে টিকা নিতে পারবেন:

নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার পদ্ধতি

চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষকে টিকা দেয়া শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থা করা হয় টিকা নেওয়ার। তবে এরজন্য টিকা গ্রহীতাকে আগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সুরক্ষা অ্যাপে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর নিবন্ধনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে টিকা গ্রহণের বার্তা এলে নির্দিষ্ট তারিখ ও কেন্দ্রে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর কেন্দ্র থেকেই দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার তারিখ দিয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে সেই তারিখে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করতে হবে। দুইটি ডোজ টিকা নেওয়ার পর সুরক্ষা অ্যাপ থেকে টিকা গ্রহণের সনদ নিতে পারবেন গ্রহীতারা। তবে মনে রাখতে হবে, মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করার সময় যে কেন্দ্রের নাম বাছাই করা হয়েছিল, টিকা নেওয়ার জন্য সেখানেই যেতে হবে।

নিবন্ধন করেও যাদের বার্তা আসেনি তারা কোথায় যাবেন?

সাধারণত সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করার পর সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে টিকা গ্রহণের এসএমএস পান টিকা প্রত্যাশীরা। তবে যান্ত্রিক ত্রুটি ও অতিরিক্ত নিবন্ধনের কারণে অনেক সময় এসএমএস আসতে দেরি হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এসএমএস না আসার চিত্র দেখা গেছে। এজন্য অনেকেই পড়েছেন বিপাকে। তবে সম্প্রতি গণটিকা দান কার্যক্রমে নিবন্ধন করেও যারা এসএমএস পাননি তাদের জন্য টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

৭ আগস্ট থেকে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩ হাজার ২১৪টি কেন্দ্রে নিবন্ধন করেও এসএমএস না পাওয়াদের টিকা প্রদান করা হবে। এতে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এই ধরনের ৯টি কেন্দ্র স্থাপন করেছে ব্র্যাক।

ব্র্যাক জানায়, যাদের বয়স ২৫ বছর বা তার বেশি তারা এই ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য টিকা প্রত্যাশীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপি ও সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের সময় দেওয়া মোবাইল নম্বর সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ৩৫০ জনকে এভাবে টিকা দেওয়া হবে। তবে নারী, পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন কেন্দ্রগুলো হলো- বাড্ডার নুরের চালা সরকারি বিদ্যালয় ও শহীদ তুর্য প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন কেন্দ্রগুলো হলো- পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থিত কাউন্সিলর অফিস, ধানমণ্ডি সার্কুলার রোডের ভুতের গলিতে ধানমন্ডি কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থিত কাউন্সিলর অফিস, ধানমণ্ডি রোড ৮/এ-তে ডিঙ্গি রেস্টুরেন্ট, হাতিরপুল কাঁচাবাজার কাউন্সিলর অফিস (১৫৮/১, এলিফ্যান্ট রোড), নারিন্দায় ফকির চাঁন সরদার কমিউনিটি সেন্টার, সেগুনবাগিচা মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে কাউন্সিলর অফিস ও ডেমরায় এম এ সাত্তার হাই স্কুল।

যারা নিবন্ধনই করেননি তারা কোথায় টিকা নেবেন?

দেশের অনেক নিম্নআয়ের মানুষ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারা ব্যক্তিরা সুরক্ষা অ্যাপে টিকার নিবন্ধন করতে পারেননি। যার কারণে দেশের একটি বড় অংশ টিকা গ্রহণ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছিলেন। তাদের কথা চিন্তা করে গত ৭ আগস্ট থেকে ছয় দিনব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। যা চলবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত।

এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৪ হাজার ৬শটি ইউনিয়নে, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায় ও সিটি কর্পোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডের নির্ধারিত কেন্দ্রে একযোগে এই গণটিকা প্রদান করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই টিকাদান কার্যক্রম চলবে। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এ কর্মসূচির আওতায় ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সবার টিকা গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাই দেরি না করে প্রত্যেককে দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সুরক্ষিত থাকতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তারা।

Link copied!