• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজারে নানা অজুহাতে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি


আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২২, ০৫:৫২ পিএম
বাজারে নানা অজুহাতে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া ১১টি বিধিনিষেধের সপ্তম দিন চলছে বুধবার (১৯ জানুয়ারি)।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে জনসমাগম কম থাকলেও অলিগলির রাস্তার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মুদিদোকান ও চায়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বাড়তি জটলা চোখে পড়ে। খোলা দোকানপাটের সামনে কেউ কেউ খোশগল্পেও মেতেছেন। মানছেন না কোনো ধরনের বিধিনিষেধ। অন্যদিকে কাঁচাবাজারেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে। ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকের মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক।

বুধবার রাজধানীর গুলশান, মহাখালী, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র উঠে আসে।

সকালে মহাখালীর টিবি গেটসংলগ্ন কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছবাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। বিশেষ করে মাছ বিক্রেতা কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। কেন মাস্ক পরেননি, জিজ্ঞাসা করা হলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি তাদের কাছ থেকে। 

এদিকে মহাখালী কাঁচাবাজারে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। মুদিদোকানদার, সবজি বিক্রেতা, মাংস বিক্রেতা কিংবা মাছ বিক্রেতা অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। তা নিয়ে কারও ভ্রূক্ষেপও নেই।

অন্যদিকে মহাখালী বউবাজারের কাঁচাবাজারেও দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধির তেমন বালাই নেই। তেজগাঁও, কারওয়ান বাজারেও একই চিত্র। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। তা নিয়ে কারও ভাবান্তরও নেই। অনেকে মাস্ক হাতে, থুতনিতে কিংবা গলায় ঝুলিয়ে রাখেন।

সাততলা থেকে বাজার করতে আসা ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘‘এখানে অনেকের মুখে মাস্ক নেই। করোনা বাড়ছে তাই আমাদের সবার এখন সচেতন থাকা দরকার। শুনেছি মাস্ক না পরলে সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করে। কাঁচাবাজারগুলোতেও অভিযান করে জরিমানা করা উচিত।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘‘মাস্ক দিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। আর এখানে অনেকেই মাস্ক পরে না । আমি পরে কী লাভ হবে?’’

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, শতকরা ৯৫ ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। যাদের মুখে মাস্ক রয়েছে, তারাই এখানে সংখ্যালঘু। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে ক্রেতা ও বিক্রেতারা যেভাবে ঘোরাফেরা করছেন, তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে কারওয়ান বাজার।

পাইকারি ও খুচরা উভয় প্রকারের বাজারের জন্য রাজধানীতে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় যে কয়েকটি বাজার রয়েছে, তার মধ্যে কারওয়ান বাজার অন্যতম। অন্যান্য বাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে মাছ, মাংস, ফল ও শাকসবজি পাওয়া যায় এখানে। এ কারণে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারওয়ান বাজারে হাজারো মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তবে এমন জনসমাগমস্থলে করোনা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।

বাজারে আসা ক্রেতা মনিরুল ইসলামের কাছে মাস্ক না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘‘তাড়াতাড়ি করে বাজারে এসেছেন। তাই মাস্ক আনতে ভুলে গেছেন।’’

মাস্ক পরা আরেক ক্রেতা চন্দন সাহা বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস এখন আবার বাড়ছে। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে। তারপরও অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাজারে কেনাকাটা করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।’’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ক্রেতা আসছেন। তাদের সবাইকে তো আর বলে বলে স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব নয়। তবে এটা ঠিক যে, অধিকাংশ মানুষই এ বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সেটা আমাদের ব্যবসায়ী হোক কিংবা দোকানদারই হোক।

ক্রেতারা নিজেরাই সচেতন হয়ে কেনাকাটা করলে অনেকটা মানা সম্ভব বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা না করার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “বিষয়টি মার্কেট কমিটি ভালো জানে।’’

মুখে মাস্ক নেই তার কারণ জানতে চাইলে এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘‘করোনা বড়লোকদের জন্য। আমাগো মতো গরিবরে ধরে না। আল্লাহই আমাগো বাঁচায় রাখবো।’’

শাকসবজি ও ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, করোনার জন্য যারা অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, সেই অধিক বয়স্ক মানুষরাই নির্বিঘ্নে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, মাস্ক পরলে গরম লাগে এবং ঘামে ভিজে যায়, অস্বস্তি লাগে। তাই মাস্ক পরেননি।

স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিধিনিষেধ কার্যকরে কাঁচাবাজারগুলোতে মনিটরিং করা হচ্ছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৫-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘‘আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান প্রতিদিনই চলছে। যখনই আমাদের অভিযান চলে তখন অনেকেই সতর্ক হয়ে যায় এবং মাস্ক পরে।’’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মানুষকে সচেতন করার জন্য মোবাইল কোর্ট কিন্তু একমাত্র পথ নয়, যদি নিজের থেকে কেউ সচেতন না হয়। আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে সচেতন করছি। এমনকি জরিমানার আওতায়ও আনা হচ্ছে। করোনাভাইরাসকে মানুষ আসলে হালকাভাবে এখনো চিন্তা করছে।’’

কারওয়ান বাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকায় এমন পরিস্থিতির বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘‘আমরা খুব শিগগিরই কারওয়ান বাজার এলাকায় অভিযান চালাবো।’’

এদিকে সরকারের দেওয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, মাস্ক না পরলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে এবং জেল পর্যন্ত হতে পারে।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণরোধে মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই। রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারিভাবে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে। অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে বর্তমানে বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে পঞ্চাশ বা তার ঊর্ধ্ব বয়সী, করোনা রোগীদের সেবাদানের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের এবং ফ্রন্ট লাইনারদের বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও  ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫০০ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশে। করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৯৪ জনে।

Link copied!