অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত বইমেলা, আমাদের প্রাণের মেলা। পাকিস্তান সরকার আরবি ও রোমান ভাষায় বাংলা লেখার প্রচলন করতে চেয়েছিল। আমি বলবো, বাংলা যেমন আমাদের আনন্দের ভাষা তেমন আমাদের প্রতিবাদেরও ভাষা।”
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনে শহীদ ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধার জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় এবারের বইমেলা দেরি করে শুরু করতে হল। যারা বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।”
সরকার প্রধান বলেন, “১৯৪৭ সালে করাচিতে এক সভায় বাংলাকে মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানানো হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্দোলন করা হবে, এর সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন। পাকিস্তান কখনোই আমাদের ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি।”
বঙ্গবন্ধুকন্যা আরও বলেন, “বইমেলা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। বই না পড়লে মনে হয়, অনেক কিছুই হয়নি। প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের শিখতে হবে। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য এই মেলাকে অন্যমাত্রা দিয়ে গেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ তিনি ভাষার আন্দোলন করতেই কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোমান ও আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রচলন করতে চেয়েছিল পাকিস্তান। এমনকি রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাকে নিয়ে গেছিলেন। কানাডা প্রবাসী রফিক ও সালাম বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘে নিয়ে যান। কিন্তু কোনো সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাব না দিলে তা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ শুরু করি।”
‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ২০০৮ সালে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট তৈরি করি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়েত জোট এই কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল’- যোগ করেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। আমরা স্বাধীনভাবে বাংলায় কথা বলতে পারছি। হাজারো বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারছে। আমাকে শুধু নিজের ভাষা নিয়ে থাকলে চলবে না, অন্য ভাষা সম্পর্কেও জানতে হবে। এজন্য অনুবাদে জোর দিতে হবে। তাদের সাহিত্যকে জানতে হবে। মুজিববর্ষ উদযাপন করার সময় বঙ্গবন্ধুর অনেক কিছু আমি সম্পাদনা করে দিয়েছি। করোনার কারণে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। করোনার কারণে আমরা অনেক কবি, সাহিত্যিকে হারিয়েছি। আশা করছি, এই বইমেলায় যেসব বই প্রকাশিত হবে, তা সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ ১৫ তারিখে বইমেলা শুরু হয়েছে। তবে আমার ইচ্ছা এই মেলা ১৭ মার্চ পর্যন্ত চালানো। আশা করছি সবাই স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনে বইমেলায় আসবেন। সবাই টিকা নেবেন। মাস্ক পরে সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাংলাকে পরিচিত করাতে বিভিন্ন ফ্রন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল প্রকাশনা করতে হবে। আধুনিক এই প্রকাশনা বাদ দিলে চলবে না।”
সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলা একাডেমি উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন নতুন কবি সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্য গ্রাম এলাকায় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, প্রশাসন থেকেও এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমি বই মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।”