বিদায়ী বছরে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠলেও জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি থাকলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নেই বলে দাবি করেন তিনি।
শনিবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বেই আছে। তবে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নেই। গত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল। কাজেই আমি বলব, বাংলাদেশ একটি অসাধারণ দেশ। আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি নেই।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২৬ ডিসেম্বর মূল্যস্ফীতির পয়েন্ট টু পয়েন্ট (মাসওয়ারি) তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই। চলতি অর্থবছরে টানা পাঁচ মাস ধরেই বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। মাসওয়ারি মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৬ শতাংশে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নভেম্বরের শুরুতে দেশে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৮০ টাকা। এর চাপ পড়েছে সাধারণ মানুষের খরচায়।
ডিজেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। সবকিছু দেখি না। যারা এ বিষয়ে দেখেন, তাদের কাছে প্রশ্ন করুন।’
এ সময় প্রবাসীদের জন্য সুখবর দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “নতুন বছরে প্রবাসীদের জন্য সুখবর দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা বিদ্যমান ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে আশা করছি, প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও উৎসাহিত হবে। সামনে যে দুটি ঈদ আছে, তখন রেমিটেন্স বেশি আসবে। গত বছর রেমিটেন্স ২৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এ বছর ২৬ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, “আমি যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলাম, তখন জরিপ করে দেখেছি মোট রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ আসে অবৈধপথে, তথা হুন্ডির মাধ্যমে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসলে অর্থনীতি গতিশীল হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। এরপর থেকে রেমিট্যান্স ১৪ বিলিয়ন থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। এ বছর ২৬ বিলিয়ন ডলার আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানোর মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়, এক সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে সরাসরি কোনো জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো কিছু করা যায় না। যারা টাকা পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “আমদানি বাড়া ভালো। আমদানি বাড়লে রপ্তানিও বাড়ে। রপ্তানি খাতে ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছে। এজন্য রপ্তানি বাড়ছে। দেশের টাকা দেশের মধ্যেই থাকুক। এজন্য যা যা কিছু দরকার, তাই করা হবে।”