• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
টিপ পরায় হেনস্তা

বরখাস্তের পর যা জানা গেল সেই পুলিশ সম্পর্কে


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২২, ০৯:০১ পিএম
বরখাস্তের পর যা জানা গেল সেই পুলিশ সম্পর্কে

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় টিপ পরা নিয়ে তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে বরখাস্তের পর অভিযুক্ত নাজমুল তারেক সম্পর্কে উঠে আসছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ঘটনার কিছুই জানতেন না অভিযুক্ত সেই পুলিশ
হেনস্তার ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও সে সম্পর্কে কিছুই জানতেন না অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক। এর পেছনে টেলিভিশন না দেখা এবং অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের বদলে বাটন ফোন ব্যবহারকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। পরে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন টিপ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ঘটনার পর দিন অভিযুক্ত নাজমুল তারেক অফিসও করেছেন। এমনকি তার কোনো সহকর্মী বিষয়টি নিয়ে তাকে কিছু জানাননি। বর্তমানে নাজমুল তারেককে থানার হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সিসিটিভির ফুটেজের ছবি অভিযুক্ত সেই পুলিশেরই
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে নানা জল্পনা-কল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেও একদল লোককে তৎপর হতে দেখা যায়। তবে সব কিছুর পরেও ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নাজমুলকে শনাক্ত করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রটেকশন বিভাগ ও তেজগাঁও বিভাগ যৌথভাবে কনস্টেবল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফুটেজে মোটরসাইকেলে থাকা ওই ব্যক্তি যে তিনি নিজে সেটা নাজমুল স্বীকার করেছেন বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার। তিনি বলেন, “নাজমুলকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন সে এমনটা করলো, সেটাও জানার চেষ্টা চলছে।”

ঘটনার পর অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সময় লেগেছে প্রায় দুই দিন। ঘটনাটি তদন্তে ইতোমধ্যে ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে।

এক বছর ধরে পরিবর্তন হচ্ছিলেন নাজমুল
দুই বছর আগেও গান-বাজনা নিয়ে পড়ে থাকতেন কনস্টেবল নাজমুল তারেক। গত এক বছর ধরেই তার মধ্যে ‘পরিবর্তন’ লক্ষ করেছেন সহকর্মীরা। দাড়ি বড় রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদনও করেছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে তাকে অনুমতিও দেওয়া হয়। এক বছর ধরে তিনি সব ধর্মীয় অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলছেন।

যেখানে দায়িত্ব পালন করতেন নাজমুল
ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন নাজমুল তারেক। পুলিশ লাইন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি ভিআইপি, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন। ঘটনার দিন ফার্মগেটের বাসা থেকে বের হয়ে ডিউটিতে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে প্রভাষক লতা সমাদ্দারের সঙ্গে দেখা হলে টিপ পরা নিয়ে তাকে কটূক্তি করেন নাজমুল।

নাজমুল সম্পর্কে আরো কিছু
নাজমুল তারেকের জন্ম ১৯৯১ সালে যশোর জেলায়। যশোরের একটি হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১১ সালে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পান। আট মাস ধরে তিনি ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে কাজ করছেন।

তদন্ত সম্পর্কে যা বললেন পুলিশ কর্মকর্তারা
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে। পাশাপাশি ওই শিক্ষকের জিডিরও তদন্ত চলছে।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন জানান, শিক্ষিকাকে হেনস্তার ঘটনাটি তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত কনস্টেবলকে তদন্তের স্বার্থে বরখাস্ত নাকি তদন্তে দোষী হওয়ার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে হেনস্তার খবরটি যেভাবে আসছে, তাতে পুলিশের তদন্ত নিয়ে শতভাগ বিশ্বাসযোগ্যতা যাতে থাকে এবং গাফিলতির অভিযোগ না ওঠে, সেজন্য ওই অভিযুক্ত কনস্টেবলকে বরখাস্ত করা হয়েছে।”

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ঘটনার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই পুলিশ গুরুত্ব সহকারে জোরালো তদন্ত এবং অভিযুক্তকে শনাক্ত করেছে। পুলিশ যে তদন্তে আন্তরিক, গাফিলতির সুযোগ নেই—এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। আমাদের তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি তদন্ত করছে। তবে যিনি ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন, তাকে প্রমাণ করতে হবে আসলে কী ঘটনা ঘটেছে এবং ওই পুলিশ সদস্য ঘটনায় জড়িত ছিলেন।”

যা ঘটেছিল সেদিন
গত শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তের শিকার হন প্রভাষক লতা সমাদ্দার। শেরেবাংলা নগর থানায় তিনি অভিযোগ করেন, হেঁটে কলেজের দিকে যাওয়ার সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন—‘টিপ পরছোস কেন’ বলে বাজে গালি দেন তাকে। ঘটনার প্রতিবাদ জানালে একপর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়েই ওই পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ করেন লতা।

Link copied!