• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পানিবন্দী মানবেতর জীবনযাপন


রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ০২:৪২ পিএম
পানিবন্দী মানবেতর জীবনযাপন

পদ্মার পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে পদ্মাপারের চর বরাটের প্রায় ২০০ পরিবার।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, সদর উপজেলার মাহেন্দ্রপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং পাংশা উপজেলার সেনগ্রাম পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে  বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ সকালে জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের চর বরাট এলাকায় সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ১০০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন করছে।

স্থানীয় বাচ্চু শেখের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১ মাসের মত তারা পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। লকডাউন শেষে এই পানিবন্দী হয়ে যাওয়ায় তাদের কোনো কাজ নেই। নেই কোনো আয়ের উৎস। এখন পর্যন্ত কোন সরকারী অনুদানও পাই নাই।

শুভ প্রামাণিক জানান, খাবার পানির সংকট আছে। তাছাড়া আমাদের খাবারের সংকট একই সাথে গবাদীপশুর খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা হয় ষাটোর্দ্ধ নাছিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি চকির ওপর বসে বাদাম ভাজচ্ছেন। বাদাম ভাজতে ভাজতে বলেন, “পানিতে সব তলাইয়ে গেছে। রান্না ঘরের মধ্যে পানি। আমরা চকির ওপর রান্না বান্না করতেছি। খাবার কিছু নাই। তাই বাদাম ভাজতেছি।”

সবুজ মন্ডল নামের একজন বলেন, “এক মাস ধরে আমরা পানিবন্দী। খাবারের কিছু নাই। আয়-রোজগার নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানের দেখা নাই।”

আম্বিয়া খাতুন নামের এক বৃদ্ধা অভিযোগ করেন, “এখন পর্যন্ত কোনো মেম্বার চেয়ারম্যানের দেখা পেলাম না। সব চোর। গরীবের হক মাইরে খাচ্ছে। আল্লাহ্ এদের বিচার করবে।”

সালমা বেগম বলেন, “বাচ্চা পোলাপান নিয়ে খুবই বিপদে। পানির গভীরতা একেক জায়গায় একেক রকম থাকায় পানিতে কখন পোলাপান ডুবে যায় সেটা নিয়ে ভয়ে থাকি। তাছাড়া সাপ, ব্যাঙ্গে চকির ওপর উঠে বসে থাকে।”

সামসু খা বলেন, “এই পচা পানিতে থাকতে থাকতে পচড়া, চুলকানি হচ্ছে। এছাড়া ছোট বাচ্চা কাচ্চাদের জ্বর ঠান্ডা তো লেগেই আছে।”

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুল হক বলেন, পদ্মার পানি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেও নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয় নাই। আমাদের তথ্যমতে ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। প্রায় সবার কাছেই সরকারী সাহায্য পেয়েছে। বাকিদের কাছে শনিবারের মধ্যে পৌছে যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, পদ্মার পানিতে জেলার মোট ১৫১ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে।

Link copied!