অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (১৪ মার্চ) সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন। দুদকের জনসংযোগ বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি জাকির হোসেন ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৯৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে উপার্জিত ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ৭ হাজার ২০২ টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করে অবস্থান গোপন করে মানিল্ডারিংয়ের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামি জাকির ১৯৯২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে কুয়েত দূতাবাসে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কেনিয়ার নাইরোবিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন।
২০২১-২০২২ করবর্ষের আয়কর নথি অনুযায়ী তার ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ধানমন্ডি এলাকার ১ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির সি-৩ নম্বর ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় ২৬৩ অযুতাংশ জমির উপর পাঁচতলা ভবন রয়েছে, যার নির্মাণ ব্যয় ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭০০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার ২০০ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে।
পাশাপাশি ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা রোস গাড়ি ও হাতে নগদ ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০ টাকা ও ব্যাংকে জমা ৭২ হাজার ৫০৬ টাকাসহ ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তার নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৬ টাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি এসব সম্পদের বিপরীতে আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি।
দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বাগেরহাট শাখায় ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত সময়ে সাতটি অ্যাকাউন্টে ৩১ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ টাকা, সোনালী ব্যাংকের ভিকারুননিসা নূন স্কুল শাখার একটি হিসাবে ৪ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার ৯৩০ টাকা এবং পদ্মা ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ১৫টি মেয়াদি এফডিআর হিসাবে ৫ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৯ টাকাসহ মোট ৪১ কোটি ৩৬ লাখ ৭ হাজার ২০২ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অর্থের বৈধ উৎস সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র অনুন্ধানকালে পাওয়া যায়নি।
এদিকে মামলার তদন্তকালে এসব অর্থসহ আরও কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তা অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।