নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব প্রকাশ ভালো লক্ষণ না বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “আমরাও তো তাহলে অসহায়। আশা করেছিলাম এই নির্বাচন কমিশন সাহসিকতার পরিচয় দেবে। এখনো সময় আছে। প্রার্থী যদি অযোগ্য হয়, তবে কমিশন প্রার্থীতা বাতিল করতে পারে।”
সোমবার (১৩ জুন) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আসন্ন কুমিল্লার সিটি নির্বাচনই হয়তো সব না, কিন্তু এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশনের সক্ষমতা বলে দেবে আমাদের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে। এ নির্বাচন বলে দেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী হবে।”
তিনি বলেন, “অতীতের কয়েকটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, নির্বাচনে জেতা যেন জাদুর কাঠি। ১৪, ১৮ সালের নির্বাচনে আমরা তাই দেখেছি। নির্বাচনে জেতার পরই তাদের সম্পদ বেড়ে যায়।”
নির্বাচন কমিশন বলেছে তাদের কিছুই করার নেই জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “আমরা সবিনয়ে এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের স্বার্থেই কিন্তু তারা ওই পদে বসেছেন। সুতরাং, জনগণের স্বার্থ তাদের দেখতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের প্রধান সমন্বয়ক দীলিপ কুমার সরকার।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দীলিপ কুমার সরকার বলেন, “অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভালো দৃষ্টান্তসমূহ অনুসরণ করুন। সব দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন। প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে কঠোর হোন। কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন, যাতে তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ না করতে পারে। নির্বাচনে কোনো এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে সেই এলাকার নির্বাচন স্থগিত করুন। প্রয়োজনে ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে হবে।”
মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুজন জানায়, নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।
ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুজন জানায়, অর্থ বা অন্যকিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক অর্থাৎ কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।
প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুজনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, “নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন। অর্থ বা অন্যকিছুর বিনিময়ে ভোট ক্রয় থেকে বিরত থাকুন। ভোটার বা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন বা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন এবং যেকোনো ধরনের ফলাফল স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিন।”