• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

‘তুর্কি নাগরিকের মাঙ্কিপক্স নয়, পুরোনো চর্মরোগ’


আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২, ০২:৪৩ পিএম
‘তুর্কি নাগরিকের মাঙ্কিপক্স নয়, পুরোনো চর্মরোগ’

মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত সন্দেহে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আকসি আলতে (৩২) নামের এক তুর্কি নাগরিককে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে শরীরে যে র‌্যাশের কারণে তাকে মাঙ্কিপক্স রোগী বলে সন্দেহ করা হয়েছে, সেগুলো দীর্ঘদিনের চর্মরোগ। তার চিকিৎসার ইতিহাস পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে এটা পুরোনো চর্মরোগ। তা ছাড়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের এক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞও তাকে দেখে একই মতামত দেন। এই রোগীকে এখন চর্মরোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বুধবার (৮ জুন) সকালে সংবাদ প্রকাশকে এসব তথ্য জানান সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “মাঙ্কিপক্স সন্দেহে তুরস্কের যে নাগরিককে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তার শরীরে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ নেই। তারপরও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছে, আরটিপিসিআর টেস্টের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পর নিশ্চিত হওয়া যাবে ওই রোগী ম্যাক্সিপক্সে আক্রান্ত কি না।”

তুর্কি নাগরিকের শরীরে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারব। আমাদের ধারণা যেহেতু তার চর্মরোগ, তাই মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ার কথা নয়। আর যদি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।”

‘মাঙ্কিপক্স’ সংক্রমণের মতো রোগীকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে এ ধরনের বিশেষ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। এখানে ১০টি বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা আছে। এ ধরনের রোগে এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে কোনো রোগী আসেননি। তবে কোনো রোগী যদি আক্রান্ত হন তাহলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।”

এর আগে মঙ্গলবার (৭ জুন) টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দুপুর ১২টায় ঢাকায় পৌঁছান ওই তুর্কি নাগরিক। এরপর বিমানবন্দরে তার কিছু উপসর্গে মাঙ্কিপক্স সন্দেহ হলে কর্তৃপক্ষ তাকে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। বিমানে মোট ২১৬ জন যাত্রী ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত সন্দেহে ওই তুর্কি নাগরিককে হাসপাতালে ভর্তির খবর গণমাধ্যমে আসার পর ‘দেশে বিদেশি একজন নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়।  

বিভ্রান্তি নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেউ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়নি। এই মুহূর্তে দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি নেই।

মাঙ্কিপক্স কী?

মাঙ্কিপক্স একধরনের ভাইরাসজনিত ইনফেকশন, যে ভাইরাস পশ্চিম আফ্রিকা ও মধ্য আফ্রিকার জঙ্গলের ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর মধ্যে থাকে।

চলতি বছরের ৭ মে যুক্তরাজ্যে নাইজেরিয়াফেরত এক ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস শনাক্ত হয়। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্বের ৩৬টি দেশের ৫০০ জনের বেশি মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে সতর্ক করে দেশের সব বন্দর-সংশ্লিষ্টদের কাছে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

চিঠিতে বিমানবন্দরের মেডিকেল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারও মধ্যে উপসর্গ থাকলে বা সন্দেহ হলে তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত সংক্রামক হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

Link copied!