নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতায় ঢাকার বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করে দেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ : জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
সংস্থাটির পরিচালক বলেন, “২০১৬ হতে ২০২১ সালের অর্থাৎ গত ৬ বছরে জানুয়ারি মাসের বায়ুমান সূচকের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণরে পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যা ২০২২ সালে জানুয়ারির ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর।”
ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলনে, ‘‘গবষেণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে করে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু গ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়নি। বায়ুমান বেশিরভাগ সময় ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিলো। গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র দুই শতাংশ অর্থাৎ মাত্র ৩৮ দিন পর্যন্ত ভালো বায়ু গ্রহণ করেছে।”
ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলনে, ‘‘প্রতি ২৪ ঘণ্টা ভিত্তিতে ঢাকা শহরে বায়ু দূষণের মান রাতের বেলায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রে (ক্যাপস) এর তথ্য মতে, ঢাকা শহরে বিকাল ৪টার পর থেকে বায়ু দূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে। যা রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়। গত ছয় বছরে গড় বায়ুর মান বিশ্লেষণে করে দেখা যায়, রাত ১ টার সময় বায়ুমান সূচক ছিলো ১৬২ যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে র্সবোচ্চ।”
এছাড়া রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে যার কারণে এসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গেল ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। তথ্য-উপাত্তে আরও উঠে এসেছে, প্রতিটি স্থানের গড় বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েকগুণ বেশি।
গবেষণা অনুযায়ী, রাজধানীর আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি ৩২, সংসদ ভবন এলাকা, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ ছিল। যা প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মানমাত্রার প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলন থেকে শব্দ দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারশি তুলে ধরা হয়।
সুপারশিগুলো হলো :
• শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধদিপ্তরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবো।
• নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরবিহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।
• রাস্তায় ধূলা সংগ্রহরে জন্য সাকশন ট্রাকরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
• অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে।
• সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরমিাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
• ঢাকার আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।
• আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
• বায়ু নির্মল আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।
• পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপা’র নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইবনুল সাঈদ রানা, ক্যাপসের গবেষণা শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ আল নাঈম, যুব বাপার সদস্যসচিব রাওমান স্মিতা প্রমুখ।