• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডিম ও মুরগিতে ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি টাকা লুট


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২২, ০৩:৫২ পিএম
ডিম ও মুরগিতে ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি টাকা লুট

দেশের ডিম ও মুরগির বাজার মাফিয়া চক্রের হাতে আছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, এ চক্র গত ১৫ দিনে হাতিয়ে নিয়েছে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

শনিবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করে সারা দেশের প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের সংগঠনটি।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, “প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায়, ফিড ও অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ায়, উৎপাদনের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সমন্বয় না হওয়ায় অনেকে খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। গত ১৫ দিনে দেশের পোলট্রিশিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েকটা কেম্পানি ২-৩ দিন ডিম মজুত করে রেখে বাজারে না ছেড়ে প্রতিটি ডিমে আড়াই থেকে তিন টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে। সারা দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা চার কোটি ৩০ লাখের বেশি। যার মধ্যে আড়াই কোটি ডিম উৎপাদন করে এসব কোম্পানিগুলো। ফলে তাদের খেয়াল খুশি মতো তারা দাম নিয়ন্ত্রণ করে।”

সুমন হাওলাদার বলেন, “গত দুই সপ্তাহে চক্রটি পরিকল্পিতভাবে ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দেশে পোলট্রি খাত মাফিয়া চক্রের হাতে চলে গেছে। কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, নারিশ, ৭১, আফিল, সাগুনাসহ ১০ থেকে ১২টি বড় কোম্পানি যৌথভাবে এই চক্র তৈরি করেছে। চক্রটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করতে চাইছে।”

সুমন হাওলাদার আরও বলেন, “যেসব খামারি এসব কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করে, তাদের কথা শোনে, সেসব খামারিরা ৫০ কেজির এক বস্তা ফিড কিনতে পারেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়। অন্যদের একই ফিড কিনতে হয় ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। এই ফিডও ওই সব কোম্পানিরা আমদানি করে থাকে। এসব ফিড বাধ্য হয়ে খামারিদের কিনতে হয়। এগুলোর মান দেখার কেউ নেই।”

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম সাধারণত ২২ থেকে ২৫ টাকা। অথচ এই সব কোম্পানি একজোট হয়ে প্রান্তিক খামারিদের কাছে একটা বাচ্চা বিক্রি করেন ৪০ টাকা পর্যন্ত। এসব বাচ্চা উৎপাদনের জন্য যেসব মেশিনারিজ দরকার, তা নেই প্রান্তিক খামারিদের। এর জন্য কোনো ব্যাংকঋণ দেওয়া হয় না পোলট্রি খামারিদের। অথচ কোম্পানিগুলো ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ সুবিধা পাচ্ছে। এর কারণে তারা পুরো পোলট্রিশিল্পকে নিয়ে খেলছে। সিন্ডিকেট করে খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।”

এদিকে অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি মজুত সংকট তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে তা ছেড়ে প্রতি কেজিতে বাড়তি নেওয়া হয়েছে ১৫ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৫ দিনে বড় কোম্পানিগুলো ১৭২ কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে। 

সংগঠনটির ভাষ্য, প্রতিদিন ১ কোটি ৩০ লাখ বাচ্চা বিক্রি থেকে গড়ে ১২৯ টাকা বেশি নিয়েছে বড় কোম্পানিগুলো। এর মাধ্যমে গত ১৫ দিনে তাদের বাড়তি মুনাফা ২৩৪ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুরগি ও ডিমের দাম আসলে আড়তে নির্ধারণ হয় না। সারা দেশে আড়তগুলোতে বড় কোম্পানির লোকজন থাকে। বড় কোম্পানিগুলো যে দাম নির্ধারণ করতে বলে, আড়তগুলোতে সেই দামেই নির্ধারণ হয়ে থাকে।

এই প্রক্রিয়া দেশের ভোক্তাদের জন্য শুভ নয় মন্তব্য করে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এতে প্রান্তিক খামারিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন এবং প্রতিটি ডিম ২০ টাকায় খেতে হবে। আর ব্রয়লার মুরগি খেতে হবে ৪০০ টাকা কেজিতে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, বড় কোম্পানিগুলো ‘নীল নকশা’ ধরেই এগোচ্ছে। তাদের এ চক্রান্তে মদদ দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

দেশের ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীল করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিয়মিত বাজার তদারকির পরামর্শ দিয়েছেন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহসভাপতি বাপ্পি কুমার দেবসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।

Link copied!