• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

টিকার সনদ দেখতে হোটেল-রেস্তোরাঁর অনীহা


আবদুল্লাহ আল মামুন
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২, ০২:১৩ পিএম
টিকার সনদ দেখতে হোটেল-রেস্তোরাঁর অনীহা

করোনা সংক্রমণ রোধে নতুন ৫টি নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এর আগে ১৩ জানুয়ারি থেকে সরকারের দেওয়া ১১ দফা বিধিনিষেধ শুরু হয়। ওই বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া খাবার হোটেলে বসে খেতে ও আবাসিক হোটেলে থাকতে হলে অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ মানার নির্দেশনা দেওয়া হলেও মানছে না রাজধানীর হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো। শুধু তা-ই নয়, মাস্ক না পরা ব্যক্তিদেরও রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী, বাড্ডা, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও কাকরাইল এলাকার বেশ কয়েকটি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমনটা চলে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো, বিধিনিষেধের সময়ও চিত্রটা একই রকম। মানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই চলছে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। মাস্ক ছাড়াই একের পর এক মানুষ হোটেলে প্রবেশ করছেন। যারা খাবার এনে দিচ্ছেন, তারাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। মুখে মাস্ক ছাড়াই খাবার পরিবেশন করছেন হোটেলের কর্মচারীরা। আর বিষয়টিতে কোনো নজর নেই হোটেল কর্তৃপক্ষের। হোটেলে আসা কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাও করছে না, করোনা টিকা নিয়েছে কি না কিংবা টিকার সনদ আছে কি না?

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার বিষয়টি নিয়েই কথা হয় হোটেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। হোটেল ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছরের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ ছিল হোটেল-রেস্তোরাঁ। সেই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এখন সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করে চললে ব্যবসা চালাতেই কষ্ট হয়ে পড়বে। আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

মহাখালীর মুসলিম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ আলম সংবাদ প্রকাশকে  বলেন, ‘একজন মানুষ টিকা দিতে পারে নাই, কিন্তু সে খেতে এলে তাকে তো বের করে দিতে পারি না। জনগণের টিকা সম্পূর্ণ না হওয়ায় অনেকেই ভুক্তভোগী। তবে টিকা পেতে অনেকের ভোগান্তিও হচ্ছে।’

মহাখালীর ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মো. জুলহাস সংবাদ প্রকাশকে বলেন,  ‘আমাদের হোটেলের প্রবেশমুখেই কিন্তু করোনা টিকা সনদ দেখিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এই ব্যাপারে নোটিশও দেওয়া আছে। অনেকেই এ নিয়ম পালন করছে। আমরা বেশির ভাগ মানুষদের কাছে টিকা সনদ আছে কি না বিষয়টি দেখছি। তবে শিক্ষার্থী যারা ভার্সিটি পড়ুয়া, তারা করোনা সনদ সঙ্গে করে না আনলেও কিছু বলা যায় না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হোটেলে খেতে আসা পাভেল নামের একজনের সঙ্গে। পাভেল বলেন, ‘প্রবেশের সময় জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে টিকা নিয়েছি কি না। তবে তেমনভাবে সবাইকে তদারকি করছে না। আর এই হোটেলে বেশির ভাগই শিক্ষার্থীরা খেতে আসে। তাদের সবাই তো আর করোনা সনদ সঙ্গে রাখে না।’

বাড্ডার লিংক রোডের পাশেই নান্না বিরিয়ানির এক কর্মচারী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘আমাদের এখানে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত মানুষ খেতে আসেন। তাদের বেশির ভাগ লোকের টিকা সনদ নেই। টিকা সনদ না থাকলে যদি খাবার না দিই, তাহলে তো তারা অন্য হোটেলে চলে যাবে। তাই খাবার দিতে হচ্ছে।’

সেই হোটেলেই খাবার খেতে আসা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি টিকা দিয়েছি কিন্তু টিকা কার্ড সঙ্গে নেই। এখানে কেউ দেখতে চাননি।’

মগবাজার মোড়ে ক্যাফে ডি মান্নাত হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট খেতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার টিকার সনদ আছে। তারপরও হোটেল কর্তৃপক্ষ তো কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি। সব সময়ের মতোই হোটেলে ঢুকেছি, আর খাবার খাচ্ছি।’

রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা আর সরকারের নির্দেশনা না মানার বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসানের সঙ্গে। সংবাদ প্রকাশকে মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, “রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে চাইলে ক্রেতাকে করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়। আমরা সরকারকে বলেছি, বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।’

মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কাস্টমারকে সনদ দেখিয়ে প্রবেশ করানোর জন্য। কিন্তু কাস্টমার তো মানতে চায় না। সনদ নিয়ে কয়জন ঘুরে? অনেকে টিকা সনদ খুঁজেই পায় না। আমরা চেষ্টা করছি, সরকারের নির্দেশনা মানার জন্য। কঠোরভাবে সবাইকে বলা আছে, যদি কেউ না মানেন, তখন সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা আমরা বহন করব না।’

হোটেল-রেস্তোরাঁয় করোনা সনদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা পিয়াল হাসান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এখন মূলত স্বাস্থ্যবিধিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক ব্যবহার করার জন্য সচেতন করা হচ্ছে। অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স নেই, যারা গুরুতর অপরাধ করছে বিধি মোতাবেক তাদের শাস্তি বা আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’

পিয়াল হাসান আরও বলেন, “রোববার থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে ৫ লাখ মাস্ক বিতরণ শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়লে পরে হার্ডলাইনে যাওয়া হবে।’ 

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘হোটেল-রেস্তোরাঁয় এখন আমাদের নির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযান চালানো হচ্ছে না। তবে অন্যান্য অভিযানের পাশাপাশি এগুলো থাকছে। ডেডিকেটেডলি আমাদের এ ধরনের কোনো করোনা অভিযান নেই। কারণ এ-সংক্রান্ত আমাদের মন্ত্রণালয়েরও নির্দেশনা নেই।’

উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৫-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান হচ্ছে না।’

এদিকে হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা প্রতিরোধে সরকারের সব নির্দেশনা মানতে চান হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরা। তবে যারা টিকা দিতে পারেননি, তাদেরও সেবা দিতে চান তারা। আবার কেউ কেউ বলছেন, খাবারগ্রহীতার কাছ থেকে কীভাবে টিকা সনদ দেখা হবে সে বিষয়েও সরকারের গাইডলাইন দিতে হবে। অনেকে টিকা সনদ যাচাই করার পদ্ধতির কথাও বলেছেন।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর-১ বৈশাখী সুপার মার্কেট ও খিলখেত বাজারসংলগ্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণসহ সরকারি নির্দেশনাসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১০টি মামলায় ২৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবেদ আলী (অঞ্চল-৪) ও মো. জুলকার নায়ন (অঞ্চল-১)। অভিযানে ৯০টির বেশি রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট পরিদর্শন করেন তারা। বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স না থাকার কারণে মামলাসহ জরিমানা আদায় করা হয়। অন্যদিকে জনসচেতনতা বাড়াতে সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করছেন ডিএনসিসির  ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ জন। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশে।

করোনায় এ পর্যন্ত দেশে ২৮ হাজার ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে; শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জনে।

Link copied!