নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জুয়ার টাকা জোগার করতে মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একইসঙ্গে এ ঘটনায় করা মামলায় প্রধান আসামি সাদিকুর সাদিকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংস্থাটির দাবি, রোববার (৩ জুলাই) প্রধান আসামি আইপিএলের জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে এবং স্বর্ণালঙ্কারের লোভে রাজিয়া সুলতানা ও তার শিশু সন্তান তালহাকে বটি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। সোমবার (১১ জুলাই) দুপুরে ধানমন্ডির পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আসামি সাদিকুর তাদের এলাকায় সাকিব নিটওয়্যার এ ফিটার ম্যান পোস্টে চাকরি করে। সে বেশ কিছু টাকা ধার করে আইপিএল ক্রিকেটে জুয়া খেলে নষ্ট করেন। পরবর্তীতে পাওনাদারদের চাপে তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তখন সে পাগলের মত আরও টাকা খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে সে জানতে পারে তার পাশের বাড়ির কাকুলী ভাবির কাছে বেশ টাকা পয়সা আছে এবং তার ঘরে অনেক সোনাদানা আছে। সে জানত কাকুলী ভাবির একটা শিশু সন্তান ছাড়া ওই ঘরে আর কেউ থাকত না। আর তিনি ছিলেন বিধবা। প্রায় ২ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। তখন আসামি সাদিকুর ওরফে সাদি মনে মনে কাকুলীর কাছ থেকে টাকা ধার করার চিন্তা করেন। ঘটনার দিন ২ জুলাই (শনিবার) সন্ধ্যার সময় অফিস থেকে বাড়িতে আসে এবং কাকুলীর বাড়ির আশপাশ দিয়া হাঁটাহাঁটি করতে থাকেন। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় যখন আশপাশের সবাই ঘুমিয়ে যায় তখন সে কাকুলীর বাড়ির গেটে গিয়ে তাকে ৩/৪ বার ভাবি ভাবি বলে ডেকে গেট খুলতে বলে। ঘরে ঢুকে সাদিকুর কাকুলীর হাতে পায় ধরে ১০ হাজার টাকা চান। কাকুলী বলে তার কাছে কোনো টাকা নাই। আসামি তখন অনেক জোড়াজুড়ি করার পর কাকুলী তাকে আলমারি খুলে বলে ‘দেখ আলমারিতে শুধু ১০০ টাকা আছে। আর কোনো টাকা নাই।’ আলমারিটা খুললে সে আলমারির ভিতরে একটি বাক্সে কিছু সোনার জিনিসপত্র দেখতে পায়। তখন সোনা নেওয়ার জন্য তার লোভ লেগে যায়। কাকুলী তখন আলমারির চাবিটা আলমারির ওপরে রাখলে আসামি দেখে ফেলেন। তখন আসামি কাকুলীকে চেয়ারে বসিয়ে বিছানার ওপর থেকে তা ব্যবহৃত ওড়না দিয়া গলায় ফাঁস দেয়। কাকুলী নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেলে বিছানার পাশেই রাখা ইস্ত্রি দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করলে ভিকটিম পুরাপুরি অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন সাদিকুর দ্রুত ভিকটিমের রান্না ঘর হতে সবজি কাটার বটি আনেন এবং কাকুলীর গলা কেটে ফেলে।
তারপর সে দ্রুত আলমারি খুলে ২টি স্বর্ণের আংটি, ২টি স্বর্ণের চেন, ১ জোড়া কানের দুল নিয়ে নেয়। তারপর সে পাশের রুমের খাটের ওপর ঘুমন্ত তালহাকে (ভিকটিম কাকুলীর ছেলে) ওই বটি দিয়েই গলায় হত্যা করে। তখন তালহা একটি চিৎকার দিয়েছিল। তারপর আসামি সাদিকুর সোনার গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে শুক্রবার (৯ জুলাই) আসামিকে আড়াইহাজারের তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। আসামি সাদিকুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পিবিআই।
৩ জুলাই রাতে আড়াইহাজারের ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা ও ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাজিয়ার স্বামী আউয়াল বছর চার আগে মারা গেছেন বলে জানা যায়।