ঢাকার আশুলিয়ায় দেড় বছরের শিশু অপহরণের তিন মাস পরে গাজীপুর থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। র্যাব জানায়, শিশু আঁখিকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. রাশেদুল ইসলাম (৩০) ও রোকসানা (৩৫)।
মঙ্গলবার (৩১ মে) বেলা ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা র্যাবকে জানায়, অপহরণকারী মো. রাশেদুল ইসলাম দুই বছর ধরে আশুলিয়া থানাধীন জিরানী বাজার কলেজ রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। অপহরণকারীর স্ত্রী নুরজাহান ও অপহৃত শিশুটির মা মিরা আক্তার আশুলিয়ায় একই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। এর সুবাদে দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে অপহরণকারীর স্ত্রী পরকীয়ায় তাদের সাত বছরের শিশুসন্তানকে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। মাহারা শিশুটিকে নিয়ে আসামি রাশেদ বিপদে পড়ে যান। রাশেদের স্ত্রী কার সঙ্গে গেছেন এবং কোথায় আছেন এ বিষয়টি অপহৃত শিশু ভিকটিম আঁখি আক্তারের মা মিরা আক্তার জানে বলে অপহরণকারী রাশেদের সন্দেহ হয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বেশ কয়েক দিন ভিকটিমের মা মিরা আক্তারের কাছে রাশেদ তার স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানা জানার জন্য একাধিকবার জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু প্রতিবার মিরা আক্তার জানান যে রাশেদের স্ত্রীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু আসামি রাশেদ তার স্ত্রীর সঠিক অবস্থান জানার উদ্দেশ্যে সাদ্দাম ও মিরা দম্পতির দেড় বছরের শিশু আঁখিকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাদ্দাম ও মিরা দম্পতি কাজে চলে যাওয়ার পরে গত ৩১ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অপহরণকারী রাশেদ বাসা ভাড়া নেওয়ার কৌশলে অপহৃত শিশু আঁখি আক্তারের নানিকে বাসা ভাড়ার বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে কৌশলে অপহৃত শিশুর বড় ভাই মিরাজকে (৫) ১০ টাকা দিয়ে চকলেট খাওয়ার জন্য মুদিদোকানে পাঠান। পরে অপহরণকারী ওই দোকানের পাশ থেকে সুযোগ বুঝে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম শিশু আঁখি আক্তারকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যান।
ঘটনার পর অপহৃত শিশুটির অবস্থান জানার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালাতে থাকে। কিন্তু আসামি অজ্ঞাত হওয়ায় ভিকটিম শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে অপহরণকারী রাশেদ ভিকটিম শিশুটির বাবা-মাকে ফোন করে জানান যে শিশুটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে শিশুটিকে ফেরত দেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে অপহৃত শিশুটির বাবা-মা অপহরণকারীর স্ত্রীর ঠিকানা জানতেন না। ফলে সঠিক ঠিকানা দিতে পারেননি। অপহরণকারী একপর্যায়ে অপহৃত ভিকটিম আঁখির বাবা-মার কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং সেই মোতাবেক অপহরণকারীর বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থান জেনে যাবে, সেই ভয়ে আসামি রাশেদ মুক্তিপণের টাকা উত্তোলন না করে মোবাইল বন্ধ করে দেন এবং গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত কোনো মোবাইল ব্যবহার করেননি।
ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন , “বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) আনুমানিক সকাল ১০টার সময় ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকা থেকে দেড় বছরের শিশু আঁখিকে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক যুবক অপহরণ করে। শিশুটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার পাইতা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে। সাদ্দাম হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও তার স্ত্রী মিরা আক্তার পোশাক শ্রমিক। তারা আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকায় আলী হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।”
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “এজাহাভুক্ত অপহরণকারী অজ্ঞাত সেই যুবক ঘটনার কয়েক দিন আগে শিমুলিয়ায় আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তখন বাড়ির ম্যানেজার নেই বলে তিনি কথাবার্তা বলে চলে যান। অপহরণকারী পুনরায় ঘটনার দিন বাসা ভাড়া নিতে আসেন। সে সময় গেটের বাইরে খোলা জায়গায় মিরা ও সাদ্দাম দম্পতির সন্তান আঁখি এবং মিরাজ খেলাধুলা করছিল। অপহরণকারী একপর্যায়ে ভুক্তভোগী আঁখির ভাই মিরাজকে (৫) কিছু টাকা দিয়ে কৌশলে দোকানে চকলেট কেনার জন্য পাঠান। সেই ফাঁকে দোকানের আড়ালে থাকা আঁখিকে কোলে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান অপহরণকারী। ওই ঘটনার পরের দিন গত ১ এপ্রিল শিশুটির দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি শিশু অপহরণ মামলা করেন।”
র্যাব-৪-এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, অপহরণকারী রংপুর জেলায় আত্মগোপনে রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪-এর একটি আভিযানিক দল র্যাব-১৩-এর সহযোগিতায় সোমবার (৩০ মে) রাতে রংপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী মো. রাশেদুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণকারীর দেওয়া তথ্যমতে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকার একটি বাসা থেকে রোকসানার (৩৫) হেফাজত থেকে দেড় বছরের অপহৃত শিশু আঁখিকে উদ্ধার করা হয়।
মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “আসামি রাশেদ জানায়, ঘটনার দিনই অপহৃত শিশু আঁখিকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার রতনপুর এলাকায় তার ফুফু আসামি রোকসানার কাছে নিয়ে গিয়ে নিজের মেয়ে পরিচয় দিয়ে ফুফুর কাছে কিছুদিন রাখতে অনুরোধ করেন এবং তিনি নিজে গ্রামের বাড়ি রংপুরে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। আসামি রোকসানার নিজের কোনো কন্যাসন্তান না থাকায় সযত্নে মায়ের আদরে শিশু আঁখিকে লালন-পালন করতে থাকেন। উদ্ধার হওয়ার আগপর্যন্ত শিশু আঁখি আসামি রাশেদের ফুফু রোকসানার হেফাজতে ছিল।”
গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।