তিন দফায় ৫৫ টাকা বাড়ানোর পর ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
সোমবার (২৭ জুন) থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। অথচ মঙ্গলবারও বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। অর্থাৎ খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার ২০৫ টাকা, পাঁচ লিটার ৯৮০-৯৯০ টাকা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে পাইকারি বাজারেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, নতুন ডিও লেটার দিলে কম দামের তেল পাওয়া যাবে। তাতে আরও দুই থেকে তিনদিন সময় লাগবে, ক্রেতাদের সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালীসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভোজ্য তেলের এই চিত্র পাওয়া গেছে।
নতুন দর অনুযায়ী, পাঁচ টাকা কমে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল খুচরায় ১৮০ টাকা, ছয় টাকা কমে বোতলজাত তেল ১৯৯ টাকা এবং ১৭ টাকা কমিয়ে ৫ লিটার বোতল ৯৮০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হবে জানিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও আমাদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।
মহাখালী কাঁচাবাজারের নুসরাত এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মো. মজিবুর রহমান বলেন, “নতুন দামের তেল এখনো আসেনি। ঈদের আগেই চলে আসবে। এখন আমরা আগের দামেই তেল বিক্রি করছি। অর্থাৎ প্রতি লিটার ২০৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতল ৯৮০ টাকা।”
একই কথা জানান আরেক ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান। তিনি বলেন, “আগের দামেই এক লিটার ২০৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৮০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। মিল মালিকরা দাম কমার ঘোষণা দিলেও আমরা হাতে পায়নি।”
তবে মহাখালীর কাঁচা বাজারে অধিকাংশ দোকানে ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৯৯০ টাকা করেও বিক্রি করতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের জাকির হোসেন বলেন, “আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে সয়াবিন তেল। মিল থেকে ডিলারের কাছে আসবে। তারপর আমরা কম দামের অর্থাৎ নতুন রেটের তেল ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করতে পারব। বর্তমানে এক লিটার ২০০ থেকে ২০৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।”
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, “আগের দামেই এক লিটার ২০৫ টাকা, ৫ লিটার ৯৮০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে এবং খোলা সয়াবিন ২১০ টাকা করে বিক্রি করছি। মিল মালিকরা দাম কমার ঘোষণা দিলেও আমরা হাতে পায়নি।”
ভোক্তাদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব জানায়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম ২৬ শতাংশের মতো কমেছে। কারণ চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল এক হাজার ৯৫৬ ডলার। এপ্রিলে কমে প্রতি টন এক হাজার ৯৪৭ ডলার বিক্রি হয়। আর বর্তমানে টনপ্রতি এক হাজার ৪৬৪ ডলার দামে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ এক মাসে তেলের দাম কমেছে ২৬ শতাংশ। অথচ মিল মালিকরা সোমবার থেকে তেলের দাম লিটারে কমিয়েছে ৩ শতাংশেরও কম। বাজেট ঘোষণার দিন লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হলেও ১৮ দিন পর দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ৬ টাকা। আবার এই দাম কমানোর প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি সোম থেকে মঙ্গলবার।
রোববার (২৬ জুন) সচিবালয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ভোজ্যতেলের দাম কমানোর ব্যাপারে বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় দেশেও শিগগিরই দাম কমবে। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুইটি বিষয় সমন্বয় করেই নতুন দাম নির্ধারণ করা হবে। এরপর মিল মালিকরা আগে লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে এবার ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। তার প্রভাব বাজারে এখনো দেখা যায়নি।”
সবশেষ ৯ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দিন প্রথমবারের মত বোতলজাত সয়াবিনের দাম সাত টাকা বাড়িয়ে লিটারপ্রতি ২০৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর সয়াবিনসহ ভোজ্য তেলের দর বিশ্ববাজারে চড়তে থাকায় ঈদের পর ৫ মে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
এর আগে দাম বাড়ানো হয়েছিল ৬ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮টাকা বাড়িয়ে ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪৩ টাকা এবং পাম তেল লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। ওই দিন পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ঠিক করা হয় ৭৯৫ টাকা।