• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্যাস সংকট : ফ্রিজে রেখে খেতে হচ্ছে রাতের রান্না


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২, ০৯:৫৭ পিএম
গ্যাস সংকট : ফ্রিজে রেখে খেতে হচ্ছে রাতের রান্না

বিদ্যুতের লোডশেডিং কাটতে না কাটতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। এলাকাভেদে দিনের অর্ধেক সময় থাকে না গ্যাস। গ্যাসের এমন সংকটে বেশি প্রভাব পড়ছে চাকরিজীবী নারীদের। অন্যদিকে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংকটের মুহূর্তে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। বাজারে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম নিয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শীতকালে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হয়। এছাড়া ঠান্ডায় পাইপলাইনে গ্যাসের উপজাত জমে যায়, এতে বাধা পায় গ্যাস সরবরাহ। তবে এখন এই গরম কালে কেন গ্যাসের এমন সংকট, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ রাজধানীবাসী।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম। আমেনা ও তার স্বামী একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সকাল ৯টায় অফিস শুরু হওয়ায় কারণে দুইজনকেই সকাল ৮টার মধ্যে বাসা থেকে বের হতে হয়। সংবাদ প্রকাশের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আমেনা বেগমের। তিনি বলেন, “সকাল ৮টার মধ্যে তাদের একমাত্র সন্তান নাহিদ হোসেনকেও স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়। তাই খুব ভোরবেলা থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য সকালের খাবার তৈরি করতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গ্যাস সংকট সৃষ্টি হওয়ায় অনেকটা যুদ্ধ করে রান্না করতে হয়। বেশিরভাগ সময় রাতের বেলায় রান্না করে ফ্রিজে রাখতে হয়। আর পরে সকাল বেলা ফ্রিজের খাবার ঠান্ডা অবস্থায়ই খেতে হচ্ছে পরিবারের সবাইকে।”

আমেনা বেগমের পরিবারের মতো এমন গ্যাস সংকটের ফলে দুর্ভোগে দিন কাটছে আজিমপুর এলাকার বাসিন্দারাও। তাই অনেকেই মাটির চুলা ও সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে গ্যাসের এই সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের।

দেখা গেছে, রাজধানীর আজিমপুর, হাজারীবাগ, রায়ের বাজার, ওয়ারী, মিরপুর ২, আগারগাঁও, তালতলায় ও বনশ্রী এলাকায় তীব্র গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার অনেক স্থানে সকালেই গ্যাস উধাও, রাতে এলেও থাকে অল্প সময়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুরে গ্যাস আসতে কখনো দুপুর গড়িয়ে বিকেল, কখনো-বা সন্ধ্যা বা রাত হয়ে যাচ্ছে। আর রায়ের বাজার ও আজিমপুরে কখন গ্যাস থাকে, আর কখন গ্যাস থাকে না, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না এলাকাবাসী। বনশ্রীতে ভোর বেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত গ্যাসের সন্ধ্যান পাওয়া কঠিন।

আজিমপুরে এলাকার বাসিন্দারা ইখলাস হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গ্যাসের চুলায় গ্যাস নেই। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্যাসের চুলা জ্বালানো যায় না। রাতে গ্যাস এলে দুই দিনের রান্না একবারে করে রাখতে হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ থাকলেও গ্যাসের সংকট তৈরি হওয়ায় আলাদা সিলিন্ডার কিনেছেন। যারা সিলিন্ডার কেনেননি, তারা কষ্ট করে রাতে গ্যাস এলে দিনের রান্না করে রাখেন।”

এদিকে আগারগাঁও তালতলায়ও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। সাজ্জাদুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, “পুরো শীতে এমন গ্যাসের সংকট দেখলাম। কয়েকদিন ধরে এত তীব্র সমস্যা যে রান্না চড়ানো যাচ্ছে না। এ জন্য বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।”

বনশ্রীর বাসিন্দা ইফতেখান হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গ্যাস সংকটে গত এক সপ্তাহ ধরে বাসায় রান্না হচ্ছে না। কোনো চুলা জ্বলছে না। হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। বাচ্চাদের খাবারও গরম করতে করা যাচ্ছে না। এই সংকটের সমাধান কবে হবে জানি না। এভাবে চলা যায় না।”

রামপুরার আরেক বাসিন্দা সংবাদ প্রকাশকে জানান, এক সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার রান্নাঘরে চুলা জ্বলছে টিমটিম করে। রান্না করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে অল্প কিছু রান্না করছেন। অনেক সময় রাত জেগে গ্যাসের চাপ বাড়লে রান্না করতে হচ্ছে।

Link copied!