• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কবিতাই প্রতিবাদের ভাষা : শেখ হাসিনা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২২, ০১:৪৮ পিএম
কবিতাই প্রতিবাদের ভাষা : শেখ হাসিনা

একজন রাজনীতিবিদের বক্তব্যের চেয়ে কবিতা আরও বেশি শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অগ্রসর হচ্ছিল না, আমরা তখন কবিতাতেই প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিলাম।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসবে এ বছর প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদান করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে পাঁচ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসবের’ উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “বাঙালির জীবনে আঘাত কতবার এসেছে, কিন্তু বাঙালি বসে থাকেনি। বারবারই প্রতিবাদ করেছে। কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকরা যা কিছু আমাদের জন্য রেখে গেছেন, সেগুলো আমাদের সম্পদ। একটি কবিতার শক্তি যে কতটা বেশি, তা তো আমরা নিজেরাই জানি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আগ্রসর হচ্ছিল না, তখন আমরা কিন্তু কবিতার ভাষায় প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিলাম। এ দেশের প্রতিটি আন্দোলনের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অবদান আছে কবিদের এবং আবৃত্তিশিল্পীদের। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের সকলের প্রতি।”

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, “সে সময় অনেকেই যে যেভাবে পেরেছেন, লিখেছেন, নাটক করেছেন, সাহিত্য রচনা করেছেন, বই ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করে গ্রেফতারও হতে হয়েছে কাউকে কাউকে। কিন্তু থেমে থাকেননি কেউ। আমরা যখন আন্দোলন শুরু করলাম, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, তখনো কত নাটক, কবিতা, বিভিন্ন আবৃত্তির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। সেখানে অনেক বাধাবিপত্তিও এসেছে। তখনকার কবিতার উৎসব অনেক বাধার মধ্য দিয়েই করতে হতো।”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এই কবিতার মধ্য দিয়ে আমাদের অনেক না বলা কথা বলা হয়। অনেক সংগ্রামের পথও দেখানো হয়। আমি কথা বলে একটি মানুষকে যতটুকু উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে। যার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানো যায়। আসলে বাঙালিরা সহজাতভাবেই কবি, এটা হলো বাস্তবতা।”

বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়া দেশবরেণ্য সংস্কৃতিজন এবং রাজধানীর আবৃত্তি সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আহ্কাম উল্লাহ।

অনুষ্ঠানে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক’ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ প্রবর্তিত এ পদক পেয়েছেন দেশের ৬ গুণীজন। ২০২০ সালে এ পদকে ভূষিত হয়েছেন গোলাম মুস্তাফা (মরণোত্তর), ২০২১ সালে সৈয়দ হাসান ইমাম ও আশরাফুল আলম এবং ২০২২ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদকে’ ভূষিত হয়েছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী মদিনা ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিনে সংস্কৃতিবান্ধব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং গুণী আবৃত্তিশিল্পীসহ ৫০ জনকে ‘বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক’ প্রদান করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আবৃত্তি স্মারকে ভূষিত প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আবৃত্তি স্মারকে ভূষিত গুণিজনরা হলেন নাজিম মাহমুদ (মরণোত্তর), অধ্যাপক নরেণ বিশ্বাস (মরণোত্তর), ওয়াহিদুল হক (মরণোত্তর), রণজিৎ রক্ষিত (মরণোত্তর), হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য (মরণোত্তর), কাজী আরিফ (মরণোত্তর), রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, ম. হামিদ, হারুন অর রশীদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেয়া চৌধুরী, ডালিয়া আহমেদ, মীর বরকত, শিমুল মুস্তাফা, নিখিল সেন (মরণোত্তর), অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, কামরুল হাসান মঞ্জু (মরণোত্তর), কাজী আবু জাফর সিদ্দিকী (মরণোত্তর), মৃণাল সরকার (মরণোত্তর), গোলাম কুদ্দুছ, আতাউর রহমান, ফয়জুল আলম পাপপু, সুবর্ণা মুস্তাফা, ড. বিপ্লব বালা, ইস্তেকবাল হোসেন, লায়লা আফরোজ, হাসান আরিফ, বেলায়েত হোসেন, কামাল লোহানী (মরণোত্তর), মোহাম্মদ কামাল, রূপা চক্রবর্তী, আসাদুজ্জামান নূর এমপি, মো. আহকাম উল্লাহ, রেজীনা ওয়ালী লীনা, সাগর লোহানী, ড. আবদুল মালেক, তারিক সালাহউদ্দিন মাহমুদ (মরণোত্তর), কাজী মাহতাব সুমন, মাসুদুজ্জামান, এনামুল হক বাবু, নিমা রহমান, মাহিদুল ইসলাম, প্রজ্ঞা লাবনী, ইকবাল খোরশেদ, খালেদ খান (মরণোত্তর), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, রাশেদ হাসান, খান জিয়াউল হক (মরণোত্তর), গোলাম সারোয়ার, মীর মাসরুর জামান রনি, রফিকুল ইসলাম, আজহারুল হক আজাদ, এস এম মোহসিন (মরণোত্তর) ও ইশরাত নিশাত (মরণোত্তর)।

উৎসবে সারা দেশের তিন শতাধিক সংগঠনের সাড়ে চার হাজার আবৃত্তিশিল্পী অংশ নিয়েছেন। ‘জন্মের সুবর্ণে জাগো সম্প্রতির স্বরে মুক্তির ডাক দেয় পিতা আজও ঘরে ঘরে’ এই স্লোগানে সারা দেশের আবৃত্তি সংগঠনগুলোর ফেডারেশন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ উৎসবের আয়োজন করেছে। ৬৪ জেলায় একই সঙ্গে স্থানীয় সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে উৎসবের অনুষ্ঠানমালা চলবে আগামী পাঁচ দিন।

Link copied!