চট্টগ্রামের হালিশহরে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আলমগীর মিয়া (৪৯)।
র্যাব জানায়, ধর্ষক আলমগীর এর আগেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছেন। অপরাধ করে তিনি আত্মগোপনে চলে যেতেন। এ ঘটনার পরও আলমগীর স্ত্রীকে নিয়ে মানিকগঞ্জে আত্মগোপন করেন।
বুধবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, “১৩ মার্চ চট্টগ্রামের হালিশহরে ওই ছাত্রীকে (১৩) ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা পালিয়ে যায় আলমগীর। পরের দিন এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭-এর অভিযানে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে মানিকগঞ্জ থেকে আলমগীর মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে।
কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, “নিহত স্কুলছাত্রীরা তিন ভাই-বোন। সে সবার ছোট। তার বাবা পেশায় রিকশাচালক। মা পোশাক কারখানার কর্মী। নিহত ছাত্রী মেধাবী ছাত্রীও হওয়ায় পরিবারের আর্থিক সংকটের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনার দিন নিহতের মা কাজে চলে যান। তার বাবাও রিকশা নিয়ে কাজে যান। দুপুরে ভিকটিমের মা বাসায় খাবার খেতে আসেন। তখন মেয়ের দুই সহপাঠী তাকে জানান, তার মেয়ে প্রাইভেট পড়া শেষ করে স্কুলে যায়নি। পরে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায় না।”
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “আলমগীর ওই ছাত্রীদের প্রতিবেশী। আলমগীরের তালাবন্ধ বাসার লাইট ও ফ্যান চালু দেখে নিহতের বড় ভাইয়ের সন্দেহ হয়। বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে এসে রাত ৯টার দিকে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। খাটের নিচে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ওই ছাত্রীকে পড়ে থাকতে দেখেন।”
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে আলমগীর জানিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে নিহত ছাত্রী প্রাইভেট শেষে বাসায় আসে। তখন আলমগীর কৌশলে ছাত্রীকে তার বাসায় ডেকে নেয়। এরপর তাকে ধর্ষণ করেন। ওই ছাত্রী তার বাবা-মাকে ধর্ষণের বিষয়টি জানিয়ে দেবে বলে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলমগীর তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে বাসায় খাটের নিচে রেখে পালিয় যান। বাসা থেকে বেড়িয়ে আলমগীর তার স্ত্রী যে গার্মেন্টসে কাজ করে সেখানে যান। এলাকায় একজনের সঙ্গে মারামারি হয়েছে—এমন তথ্য স্ত্রীকে জানিয়ে তাকে নিয়ে শহর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান আলমগীর।
গ্রেপ্তার ধর্ষকের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আলমগীর আগে গার্মেন্টসে কাজ করতেন। তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। তিন মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহরে বসবাস শুরু করেন। তার স্ত্রীও একজন গার্মেন্টসকর্মী। বর্তমানে আলমগীর বেকার। তাই কাজ না থাকায় বাসায় অবস্থান করতেন। আগেও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে প্রথমে ধামরাই, পরে সাভার, রাজবাড়ী ও সর্বশেষ মানিকগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করেন।