আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “র্যাবের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত একপেশে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের আরও উৎসাহিত করবে।”
রোববার (১২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখ করে কাদের বলেন, “বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের সময় ১৯৭৪ সালে কিউবার কাছে পাট বিক্রির অজুহাতে খাদ্যবাহী জাহাজ মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল আমেরিকা। এছাড়া একাত্তরে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে আছে। তবুও বন্ধুত্বের প্রশ্নে স্পর্শকাতর এ বিষয়গুলোকে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেইনি।”
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দ্বিপাক্ষিক এবং অভিন্ন ইস্যুসহ বহুপাক্ষিক ইস্যুতে দুই দেশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনলগ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত এবং ব্যথিত।”
মন্ত্রী বলেন, “একটি এলিট ফোর্স হিসেবে কাজ করছে র্যাব। সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে এই বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে কাজ করছে। এ বাহিনীর কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। নারায়ণগঞ্জর ঘটনায় এ বাহিনীর অন্তত সাতজন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। কোনো অভিযোগ থাকলে বাহিনী নিজে কিংবা মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু ঢালাওভাবে অভিযোগ এনে একটি বাহিনীর প্রধান এবং সাবেক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অযৌক্তিক। মানবাধিকারের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্তই এক ধরনের মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আজ মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছে, আমরা তাদের দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আগে পর্যবেক্ষণের অনুরোধ করছি। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। যা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। সেখানে দৃশ্যমান বর্ণবাদ বিরাজ করছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছিলেন।”
অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার সূচকে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কথা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার উল্লেখ করেছে জানিয়ে কাদের বলেন, “খোদ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিকে আমেরিকা সফরে বাধা দেওয়া হয়।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর অব লেবার রবার্ট রেইচ এক টুইট বার্তায় বিশ্বকে জানিয়েছিলেন, শুধু ২০২০ সালে সে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৯৮৪টি। ২০১৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৬ হাজার ৬০০ জন। প্রতিবছর সেখানে প্রায় ১ হাজার মানুষ বিনাবিচারে মারা যায়।”
সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সিটিতে রাস্তায় নামে, তাদের অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা নিশ্চিত এ সিদ্ধান্তের গভীরে বাংলাদেশ বিরোধী কিছু ব্যক্তি ও অপশক্তির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বাংলাদেশের একটি নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি তাদের এ নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক এবং বাংলাদেশকে নিজেদের দাসত্বের রাজ্যে সমর্পিত হতে বাধ্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা বলে দেশের জনগণ মনে করে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অব্যাহত অগ্রযাত্রা তা অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই তারা এ জনপদ নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে চায়।”
এদিকে প্যালেস্টাইনে ইসরাইল যখন নির্বিচারে নারী, নিরপরাধ শিশুসহ শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংসে মিসাইল বোমা নিক্ষেপ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ইসরাইলের পক্ষে থাকে। তখন টু শব্দটাও উচ্চারণ করে না তারা। আর যারা মধ্যপ্রাচ্য, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে মানুষের মৃত্যু এবং উদবাস্তু হওয়ার পিছনে দায়ী তারা আজকে বিশ্বকে মানবাধিকারের ছবক দিচ্ছেন।”
যেকোনো ইস্যু এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলাপ আলোচনা করে সুরাহার সুযোগ রয়েছে। তা না করে একপেশে কোনো সিদ্ধান্ত বন্ধুপ্রতিম কোনো দেশের প্রতি আস্থার বহিঃপ্রকাশ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইতোমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশ তার ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানিয়েছে বলেন আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা।