ভারতীয় পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোন স্কেমিং চক্রের এক সদস্যকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। হাকান জানবারকান (৫৫) নামের ওই তুর্কি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ক্লোন করে বাংলাদেশে টাকা তোলার চেষ্টা করেছেন।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর গুলশান-১ থেকে হাকান জানবারকানকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সহযোগীর নাম মো. মফিউল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিভিন্ন মডেলের ফোন, একটি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন করা এটিএম কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড জব্দ করা হয়।
সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, হাকান জানবারকান আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্কেমিং চক্রের সদস্য। তিনি ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার সঙ্গে তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাকান জানবারকান স্বীকার করেছেন।
মো. আসাদুজ্জামান জানান, গত বছরের ৩১ জানুয়ারি হাকান ব্যবসায়িক ভিসায় ঢাকায় এসে পল্টনের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেন। এরপর ২-৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ইস্টার্ন ব্যাংকের বিভিন্ন বুথে গিয়ে এটিএম কার্ড ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে টাকা তোলার চেষ্টা করেন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, তুরস্ক, সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, বলিভিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়েসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে স্কেমিংয়ের মাধ্যমে শতাধিকবার টাকা উত্তলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। ইস্টার্ন ব্যাংক বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশকে অবহিত করে।
এসব কার্ড হাকান বিদেশ থেকেই ক্লোন করে নিয়ে এসেছেন বলে ধারণা করছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা।
মো. আসাদুজ্জামান আরও জানান, ২০১৯ সালেও একবার হাকান জানবারকান এটিএম কার্ড স্কেমিংয়ের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন মো. মফিউল ইসলামের ভাই শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি ভারতের কারাগারে আছেন। কিন্তু হাকান জানবারকান ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে তিনি সিকিম হয়ে নেপাল পৌঁছেন। নেপালে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে ফিরে যান নিজ দেশে।
হাকান এর আগেও ২০১৬, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালেও বাংলাদেশে এসেছে। তখনও তার উদ্দেশ্য ছিল এটিএম কার্ড ক্লোনিং করে বুথ থেকে টাকা তুলে নেওয়া। তার একাধিক পাসপোর্ট রয়েছে।
কার্ড ক্লোনিংয়ের অভিযোগে হাকানের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটিটিসি। এই মামলায় তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং অতীতের কোনো ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।