• ঢাকা
  • সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

৩ ধাপে প্রতারণা চালাত চক্রটি: র‌্যাব


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২২, ০৮:০০ পিএম
৩ ধাপে প্রতারণা চালাত চক্রটি: র‌্যাব

দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে চাকরি প্রত্যাশী যুবকদের টাকার বিনিময়ে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগের কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিত শামীম সোহেল ও রেবেকা প্রতারক চক্রটি। রাজধানীর পল্লবীতে অফিস স্থাপন করে তারা। সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন। 

বুধবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রটির মূলহোতাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল আবু নাঈম মো. তালাত।

গ্রেপ্তাররা হলেন মো. শামীম হোসেন (৪২), রেবেকা সুলতানা (৪২), মো. ওমর ফারুক (৩২), মো. শহিদুল ইসলাম (৪৬), মো. ইমরান (২৮), মো. শরীফুল ইসলাম (৪৮), আল আমিন (৪১), কাজী হাবিব (৩৪), মো. মাহাবুবুর রহমান সরোয়ার (৪২), মো. রুবেল শেখ (৪৫), আব্দুল মতিন (৪৫), মো. সাইফুল ইসলাম ভূইয়া (৩৬) ও মো. রফিকুল ইসলাম খোকা (৫০)। 

এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া ৩টি নিয়োগপত্র, ৩টি অফিস আদেশ, ৩টি আবেদন ফরম, ৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ৩টি চেকের ফটোকপি, ১০০ টাকার খালি ও ৮টি স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প, ৮ সেট জীবনবৃত্তান্ত, একমাত্র রাষ্ট্রীয়কার্যে ব্যবহার্য লেখা খাম ২টি, ৮৪ হাজার ৪০০ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, অসংখ্য লোকের পাসপোর্ট/ই-ভিসার ছবি, ২২টি মোবাইল ফোন ইত্যাদিসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

লে. কর্নেল আবু নাঈম মো. তালাত বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব কৌশলে চাকরিতে নিয়োগের বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন- সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নিয়োগপত্র, প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি সম্পন্ন করে গ্রামের সহজ সরল চাকরি প্রত্যাশী যুবকদের কাছ থেকে প্রতারণা পূর্বক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ র‌্যাব-২ এ অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত ৪ জন ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পল্লবী থানায় পৃথক পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-২ এর গোয়েন্দা দল বিষয়টি আমলে নিয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়।

তিনি আরও বলেন, তারা মোট তিনটি ধাপে তাদের প্রতারণার কার্যক্রম চালিয়ে যেত। গ্রামের সহজ সরল চাকরি প্রত্যাশী যুবকরা প্রতারক চক্রের প্রলোভনে সরকারি চাকরির স্বপ্নে বিভোর হয়ে জমিজমা বিক্রয়, ধার কর্জ ইত্যাদি সম্ভাব্য সকল উপায়ে টাকা পয়সা জোগাড়করত এবং চক্রের প্রাথমিক স্তরের সদস্য তাদের ঢাকায় নিয়ে আসত।

ঢাকায় নিয়ে আসার পর প্রতারক চক্রের দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব নিত। প্রতারক চক্রটির দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা ভিকটিমদের চাকরি যে আসলেই সরকারি সেই বিশ্বাস অর্জনের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপের আয়োজন করতো এবং ভিকটিমরা উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া অতিক্রম করার পর তাদের নিয়োগপত্রসহ আনুষাঙ্গিক নথিপত্র সরবরাহ করত। যেমন- প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি আয়োজন করা। বিশেষ কিছু চাকরির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তরের কয়েকজন সদস্য সুনির্দিষ্ট কিছু ভুমিকা পালন করতো। যেমন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘মেস ওয়েটার’ পদে নিয়োগ প্রাপ্তদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাদের একজন নিজেকে সিনিয়র মেস ওয়েটার হিসেবে পরিচয় দিতো এবং কৌশলে সেনানিবাসের আশেপাশে বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি সেন্টারে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে ভিকটিমদের কাজ করিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ চলছে বলা হতো।

তৃতীয় স্তরের সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অথবা ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার নিকট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের বিশ্বাস জোরদার করতে কাজ করতো। তারা সরকারি-বেসরকারী উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মেডিকেল অফিসারসহ বিভিন্ন পরিচয় ধারণ করে ভিকটিমদের নিয়োগ পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ আনুষাঙ্গিক সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতো। ক্ষেত্র বিশেষে তারা ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের আদলে সহকারীসহ মাইক্রোযোগে নির্ধারিত স্থানে যেয়ে ভিকটিমদের সাথে দেখা করতো এবং নিজেকে বড় অফিসার পরিচয় দিয়ে ও তার সুপারিশেই ভিকটিমদের চাকরি নিশ্চিত হচ্ছে মর্মে ভিকটিমদের আশস্ত করত। 

ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মূল কাজটি করতো প্রতারক চক্রের প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা এবং ভিকটিমদের বিশ্বাস অর্জনসহ সবগুলো স্তরের সাথে সমন্বয় করতঃ কাজ অনুযায়ী কমিশন বন্টনের দায়িত্ব পালন করতো প্রতারক চক্রটির তৃতীয় স্তরের সদস্যরা। তারা ভুয়া/জাল নিয়োগপত্রসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সৃজন করে প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের নিকট সরবরাহ করতো। 

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা শিকার ভিকটিমরা পল্লবী থানায় পৃথক পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করেছে। তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

Link copied!