রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের দুটি জুয়েলারি দোকান থেকে প্রায় ৭০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও কিছু হীরা চুরি করে একটি চোর চক্র। কিন্তু চোরাইকৃত মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে হারিয়ে যায় স্বর্ণ ও হীরাভর্তি একটি ব্যাগ। যা এখনো পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি এই চোর চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে কর্ণফুলী গার্ডেনর দুটি জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। চোর চক্র একটি নির্মাণাধীন ভবন দিয়ে উঠে মার্কেটের এডজাস্ট ফ্যান খুলে প্রথমে বাথরুমে প্রবেশ করে। পরে মোহনা জুয়েলার্স ও বেস্ট অ্যান্ড ক্রিয়েশন জুয়েল অ্যাভিনিউ জুয়েলার্স নামের দুটি দোকান থেকে প্রায় ৭০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও হীরা চুরি করে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় রমনা থানায় মামলা দায়েরের পর ডিবি ছায়া তদন্ত শুরু করে বলে জানান এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি আরও জানান, তদন্তে নেমে ডিবির রমনা বিভাগ গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ও সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ ২২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন ফরিদপুরের শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৮), বরিশালের শৈশব রায় ওরফে সুমন (৩৫) ও রাজধানীর তাঁতিবাজারের স্বর্ণের ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সুর (৪৫)।
ডিবি প্রধান আরো জানান, শাহীন ও শৈশব দুজনই নিজ এলাকায় চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিল। বড় চুরির উদ্দেশে তারা ঘটনার ১৫ দিন আগে ঢাকায় আসে। ঢাকায় তাদের থাকা ও চুরির কাজে সহযোগিতা করে উত্তম। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে কল্পনা বোর্ডিংয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন তিনি। এমনকি চুরির কাজে যত টাকা পয়সা খরচ হয়েছে সেটাও বহন করেন উত্তম।
এ কে এম হাফিজ আক্তার আরো জানান, গ্রেপ্তাররা প্রথমে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে রেকি করেন। এ সময় তারা বুঝতে পারেন কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। তাই এই মার্কেটেই চুরির সিদ্ধান্ত নেন তারা। প্রথমে একবার চুরি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এই চোর চক্র। পরে ১৮ ডিসেম্বর রাতে তারা দুটি জুয়েলারি দোকানে চুরি করে পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছে থাকা চুরিকৃত মালামালের মধ্যে থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও হীরাভর্তি একটি ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়।
হারিয়ে যাওয়া ব্যাগটি ফিরিয়ে দিতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, “রাস্তায় পড়ে যাওয়া সোনা ও হীরা কেউ যদি পেয়ে থাকেন তাহলে তাদের অনুরোধ জানাবো, যেন তারা এসব জিনিস দ্রুত স্থানীয় থানায় জমা দেন। যদি কেউ তা না করেন আর আমাদের তদন্তে তাদের নাম বা খোঁজ পাই, তাহলে চোরাই মাল রাখার দায়ে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
চোরাই মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, চোরাইকৃত কিছু স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু স্বর্ণ হারিয়ে গেছে। তারপরও গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে নিলে বাকি স্বর্ণালঙ্কারের বিষয়ে জানা যাবে। এছাড়া কোনো দোকানদার যদি এসব চোরাই স্বর্ণ ক্রয় করেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।