নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত নামের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ৩২২ জন।
তবে আগে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কারা এসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব শফিউল আজিম গণমাধ্যমকে তালিকা প্রকাশের তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন অনুযায়ী ১০ জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আট সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি।
এছাড়া সার্চ কমিটিকে নাম সুপারিশের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ কার্যদিবস। সেই হিসেবে তাদের হাতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থেকে তিন শতাধিক নাম পেয়েছে সার্চ কমিটি।
সবশেষ পাওয়া তথ্য মতে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ১৩৬ জন, পেশাজীবীদের কাছ থেকে ৪০ জন, ব্যক্তিগতভাবে ৩৪ জন এবং বিভিন্ন ই-মেইলের মাধ্যমে ৯৯ জনের নাম পেয়েছে সার্চ কমিটি। এছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় অন্তত ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ৩২৯ জনের নাম পাওয়া যায়।
সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে যাদের নাম রয়েছে
তারা হলেন শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, সাবেক সচিব কামরুন নাহার, সাবেক সচিব কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম।
এছাড়া তালিকায় আছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি কৃষিবিদ ইকবাল বাহার, অ্যাড.কম-এর চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া, সাবেক সচিব অশোক মাধব রায়, সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান, সাবেক তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক এস এম হারুন-উর-রশীদ, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, শিক্ষাবিদ ড. এম শমশের আলী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের নাম।
এছাড়াও বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, সাবেক সচিব জাফর আহমেদ খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর, সাবেক সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, সাবেক বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসানের নামও রয়েছে সুপারিশপ্রাপ্তদের তালিকায়।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সার্চ কমিটি বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বসবে।”
পরে এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনটি বৈঠক করে সার্চ কমিটি। এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশিষ্টজনরা নাম প্রস্তাব করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছেও নাম চাওয়া হয়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ও ই-মেইলেও নাম পাঠান। তবে বিএনপি নাম পাঠাবে না বলে শুরু থেকেই জানায়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা ছিল।
তবে স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়।
আর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার পর সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।