দেশের সবকটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আরও উন্নত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে বিমানের সেবা নিতে যাত্রীরা যাতে কোনো ধরনের কষ্ট না পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি, কাস্টমস সিস্টেমকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।”
এছাড়া লাভ-লোকসান না খুঁজে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ও যাত্রীদের হয়রানি বন্ধে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় বিমানকে আর্থিকভাবে লাভজনক করতে অন্তত দুটি কার্গো বিমান কিনে পণ্য পরিবহন সেবা চালুরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যতবার দেশের বাইরে গিয়েছি, সবসময় আমার একটা লক্ষ্য ছিল যে, আমাদের নিজেদের বিমান ব্যবহার করব। কিন্তু আমার নিজের অভিজ্ঞতা আছে যে, তখন বিমানের কী বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল। ৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন উদ্যোগ নেই। যদিও তখন আর্থিকভাবে অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উন্নয়নে আরো কিছু উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হোক। আমাদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো আরও চালু হোক, সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। মাত্র পাঁচ বছর হাতে সময় সেভাবে কাজ করে যেতে পারিনি। তবুও আমরা কাজ করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দ্বিতীয়বার আমি যখন সরকারে আসি ২০০৮ নির্বাচনে জয়ী হয়ে, ২০০৯-এ আমরা লক্ষ্য করি বাংলাদেশ বিমান নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, মুম্বাই, নারিতা এবং ইয়াঙ্গুন রুটে যে ফ্লাইট চলাচল করতো সেগুলো সব লোকসান দেয় এবং একে একে সব বন্ধই করে দিতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই যে জরাজীর্ণ একটা বিমান, এমনকি একটা গানও শোনা যেত না, যদি আমি জানলার সিটে বসতাম তখন তো ঝরঝর করে পানি পড়ত। কোনোমতে কাপড় দিয়ে সে পানি বন্ধ করা হত। এমনই আমাদের বিমানের দুর্দশা ছিল। বরং আমি আমাদের পাইলটদের সবসময় ধন্যবাদ জানাতাম যে এ ধরনের অবস্থায় সাহস করে তারা যে বিমান চালাচ্ছে এটাই একটা বড় জিনিস ছিল।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নেই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে ৪টি বৃহৎ পরিসরের বোয়িং-৭৭৭-৩০০-ইআর, চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ৪টি ৭৮৭-৮ ও ২টি ৭৮৭-৯ সহ মোট ৬টি ড্রিমলাইনার, ৬টি ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ রয়েছে। এই ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৮টি উড়োজাহাজই বিমানের নিজস্ব মালিকানাধীন। অনেকগুলো আমাদের সময়েই সংগ্রহ বা ক্রয় করা।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দিয়ে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭ এর সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এতে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। বাংলাদেশে গমনাগমনকারী সব এয়ারলাইনসকে বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দিয়ে থাকে। বিমানের একটি দক্ষ এবং অত্যন্ত কার্যকর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। চতুর্থ প্রজন্মের বিমান সংযুক্ত হওয়ায় যাত্রীদেরকে আকাশে ওয়াইফাই সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লাইট বিনোদন সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান বন্দরগুলো পার্শ্ববর্তী শহরের যাত্রীদের আরামদায়ক গমনাগমনের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনোরম কোচ সার্ভিস চালু করা হয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। করোনার সময়েও কিন্তু এর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। কাজ অব্যাহত রয়েছে। উচ্চশক্তি সম্পন্ন রাডার আমরা স্থাপন করব, সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। যেটা আমাদের বিমান চলাচলে, শুধু আমাদের বিমান না, আমাদের আকাশসীমা দিয়ে অন্য যত দেশের বিমান যাবে সবার জন্যই সেটা আমরা করে দিচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আমরা সম্প্রসারণ করে আন্তর্জাতিকমানের বিমান বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ আমাদের এই বিমান বন্দর আন্তর্জাতিক রুটের মধ্যে পড়ে। যেজন্য এই জায়গায় আমাদের অনেক অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর দরকার।”
শেখ হাসিনা বলেন, “মালদ্বীপে ইতিমধ্যে বেসরকারি খাত থেকে বিমান যাওয়া শুরু করেছে। আমি মনে করি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সব জায়গায় লাভ-লোকসান খতিয়ে দেখার দরকার নেই। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা এবং কার্গো পরিবহন একান্তভাবে দরকার।”
