• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
ঢাকা নগর পরিবহন

সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ বাস, ভোগান্তির অভিযোগ


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২২, ০৯:৫৮ পিএম
সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ বাস, ভোগান্তির অভিযোগ
ছবি: সংবাদ প্রকাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র মো. শিহাদ হোসেন। শাহবাগ মোড় থেকে মতিঝিল যাবেন। ঢাকা নগর পরিবহনের টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন আধ-ঘণ্টা ধরে। কাউন্টার থেকে বলা হয় ১০ মিনিটের মধ্যে বাস আসবে। কিন্তু ১০ মিনিট তো দূর, ৩০ মিনিটেও বাস না আসায় ক্ষুব্ধ তিনি। সংবাদ প্রকাশকে শিহাদ হোসেন বলেন, “মাঝেমধ্যে টিকিট কাটার পর অল্প সময়ের মধ্যেই বাস চলে আসে। তবে বেশির ভাগ সময়ই যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।”

চাহিদা অনুযায়ী সড়কে এই পরিবহনের বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় এমন অবস্থা বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

ঢাবির এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করবে। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর কাউন্টারগুলো বন্ধ হয়ে যায়।”

বেশ কয়েক দিন সন্ধ্যা ৭টার পর কাউন্টার খোলা পাননি বলে অভিযোগ করেন শিহাদ।

একই অভিযোগ করেন বাসে থাকা অন্য যাত্রীরাও। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা এই প্রতিবেদককে জানান, পিক টাইমে এই পরিবহনের দেখা মেলে না। এর ফলে রুটের অন্য পরিবহনে বেশি ভাড়া দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছুতে হচ্ছে।

এদিকে জনবহুল রাজধানী ঢাকার সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি দূরীকরণ, গণ পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো, ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে ও রাস্তার যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওয়াতায় চলছে ঢাকা নগর পরিবহন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই নগরবাসীর কাছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ আস্থা অর্জন করে। ফলে দিনে দিনে বাসে বাড়ে যাত্রীর সংখ্যা। কিন্তু যাত্রী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়েনি বাসের সংখ্যা ও গুণগত মান। ফলে পথে পথে ভোগান্তি রয়ে গেছে সাধারণ মানুষের। তাদের অভিযোগ, যানজট নিরসনে এর সুন্দর উদ্যোগ পরিচর্যার অভাবে যাতে নষ্ট না হয়, তা কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাস রুট রেশনালাইজেশন

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি জানায়, গত বছর ২৬ ডিসেম্বর কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড, মেডিকেল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, সাইন্সল্যাব হয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার চলে এই নগর পরিবহন। এই রুটে মাত্র ৫০টি বাস দিয়ে যাত্রা শুরু করে কমিটি। দ্রুতই এই বহরে আরো ৫০টি বাস যুক্ত করা হবে।

কমিটি আরো জানায়, শিক্ষার্থী ছাড়া এই রুটের পরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫৯ টাকা। এখানে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া দুই টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করবে। সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘পিক টাইম’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময় ৫ মিনিট পর পর যাত্রীছাউনিতে বাস এসে দাঁড়াবে। অন্য সময় আসবে প্রতি ১০ মিনিট পর পর। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবে না। কিন্তু সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়নি। বরং কিছু কিছু স্পটে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। সেখানে যাত্রী আছে, কিন্তু বাসের দেখা নেই।

যাত্রীদের অভিযোগ

জনবহুল রাজধানীর সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি দূরীকরণ, গণ পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো, ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে ও রাস্তার যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশনের সেবা পেয়ে খুশি হলেও বাস সংকট ও কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের বসার স্থান না থাকার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

মো. হোসেন নামে এক যাত্রী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়ার পর থেকে আমি এই বাসের নিয়মিত যাত্রী। এদের সার্ভিস আমার অনেক ভালো লেগেছে। আর ভাড়াও ঠিক আছে। একই দূরত্বে অন্যবাসগুলো ডাবল ভাড়া নেয়। তবে স্টপেজগুলোতে যাত্রীসেবা পর্যাপ্ত নয়। পাশাপাশি যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা অনেক কম।”

রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মন থাকেন রায়েরবাগ। বাসা থেকে প্রতিদিন বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন তিনি। নতুন এই বাস সার্ভিসে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “আগে অন্য পরিবহনে যাতায়াত করতাম। এখন ঢাকা নগর পরিবহনের বাসে করে আসি। সেবার মান অন্য বাসগুলোর তুলনায় ভালো। তবে এই পরিবহনের কিছু খারাপ দিকও আছে। বাসটি অনেক ঘুরে যায়। এর জন্য অনেক সময় ব্যয় হয়। হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ার কারণে যানজটে পড়ে অনেক সময় নষ্ট হয়।”

ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে কয়েকটা বাস চালু করা গেলে ভালো হতো বলে অভিমত এই শিক্ষার্থীর।

অপু দেব নামে এক যাত্রী নগর পরিবহনের একটি দ্বিতল বাসে কাঁচপুর থেকে জিগাতলার উদ্দেশে বাসে ওঠেন। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আগে রজনীগন্ধা পরিবহনে যাতায়াত করতাম। ওরা ভাড়া বেশি নিতো। তাছাড়া সিটও পাওয়া যেত না। এখন মাঝেমধ্যে ঢাকা নগর পরিবহনে উঠে যাই। তবে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ায় সময় একটু বেশি লাগে।”

পর্যাপ্ত সুবিধা নেই কাউন্টারগুলোতে

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসের টিকেট কাটার জন্য কাউন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়নি। ২১ কি.মি. এই রুটে প্রেসক্লাব থেকে সাইন্সল্যাবে পর্যন্ত যাওয়া আসায় ৬টি কাউন্টার আছে। শাহবাগ মোড়ে নগর পরিবহনের বাস কাউন্টারে দেখা যায়, প্রত্যেকটিতে ছোট একটা টেবিল ও ছাতা দিয়ে কাউন্টার পরিচালনা হচ্ছে। সেখানে ঠিকমতো কাউন্টার ম্যানেজারের বসার স্থান রাখা হয়নি। তাছাড়া যাত্রীরা টিকিট কেটে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন।

শাহবাগের কাউন্টার ম্যানেজার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা এখানে ডিউটি করি। প্রতিটি কাউন্টারে ছোট একটি ছাতা আর টেবিল বরাদ্দ করেছে। টেবিলগুলোতে কোনো ড্রয়ার রাখেনি কর্তৃপক্ষ । ফলে এমন তীব্র গরমে টিকিট কেটে হাতে বা পকেটে রাখতে হয়।”

“বসার ছোট প্লাস্টিকের চেয়ার রেখেছে। বসার কোনো অবস্থা আছে কিনা আপনি দেখেন?” বলে প্রতিবেদককে অনুযোগ করেন তিনি।

ওই কাউন্টার ম্যানেজার আরো বলেন,  “এই গরমের মধ্যে সামান্য ছাতার আশ্রয় নিলেও সাধারণ যাত্রীরা রোদের মধ্যেই দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করেন। অনেক যাত্রী এইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার অনেক অসুস্থ যাত্রী বসার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন।”

সন্ধ্যার পরপরই পরিবহনের কাউন্টারগুলো বন্ধ হয়ে যায় বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

বক্তব্য মেলেনি ডিটিসিএ’র

যাত্রীদের কথা ভেবে নানা ইতিবাচক উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ঢাকা নগর পরিবহন। শুরুর তিন মাসে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়াও পেয়েছে নগর পরিবহন। কিন্তু চাহিদা বিপরীতে বাস সংকট, সন্ধ্যার পর কাউন্টার বন্ধের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলতে ঢাকা নগর পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তাই এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিতে পারেননি এই প্রতিবেদক।

Link copied!