ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি। যে বাড়িতে রচিত হয়েছিল বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। এই বাড়িতেই ঘাতকদের হাতে সপরিবার নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নানা চড়াই-উৎরাইয়েরও সাক্ষী এই তিনতলাবিশিষ্ট বাড়িটি। তাই তো এখানে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় হলেও জীবনের একটি দীর্ঘ সময় তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার এই ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কাটিয়েছেন। এখানেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন নিজের সুখ-দুঃখ। নিজের রাজনৈতিক জীবনেরও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এই বাড়িতে কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। নিয়েছেন বাংলাদেশের ভাগ্যবদলের সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠা এই বাড়িটিতে বঙ্গবন্ধুর বসবাস শুরুর পেছনেও রয়েছে আরেক ইতিহাস।
যেভাবে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে বসবাস শুরু করেন বঙ্গবন্ধু
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সমানভাবে তাল মিলিয়ে চালিয়ে গেছেন আন্দোলন-সংগ্রাম। ১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতের কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ঢাকায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তিনি। কিন্তু ঢাকায় তাঁর কোনো থাকার জায়গা ছিল না। তাই ১৫০ মোগলটুলীর দলীয় কার্যালয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজেন তিনি। সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ওনাকে হল ছেড়ে দিতে হয়। এ সময় তিনি আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এভাবে বেশ কয়েক বছর থাকার পর ১৯৫৩ সালে দুই বন্ধুকে নিয়ে পুরান ঢাকার একটি মেসে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। আরমানীটোলার ৮/৩ নম্বর রজনী বোস লেনের ওই মেসটি ছিল তাঁর ফুফাতো ভাই মমিনুল হক খোকার। সেখানে একই চৌকি, কাঁথা, বালিশ, চাদর ভাগাভাগি করে রাত কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় মাঝে মাঝে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা (রেণু)। ওই মেসে থাকার সময়ই ১৯৫৪ সালের ১৫ মে যুক্তফ্রন্টের হয়ে মন্ত্রী হন শেখ মুজিবুর রহমান। মন্ত্রী হওয়ার পর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মিন্টু রোডের ৩নং সরকারি বাসভবনে ওঠেন তিনি। তবে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তাঁর মন্ত্রিত্ব চলে যায় এবং এর এক দিন পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর মাত্র তিন দিনের নোটিশে ওই বাসভবন ছাড়তে হয় তাঁর পরিবারকে। তখন সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েন শেখ ফজিলাতুন্নেছা। সে সময় সন্তানদের নিয়ে সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় এক পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেটিও তাঁকে ছাড়তে হয়। পরে সেগুনবাগিচায় একটি বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। তবে সেখানেও বেশি দিন থাকা হয়নি বঙ্গমাতার। চলে যেতে হয় টুঙ্গিপাড়ায়।
পরবর্তীকালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৫৬ সালে ফের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ মুজিব। ১৯৫৭ সালের শেষের দিকে ধানমন্ডি এলাকার আবাদি জমি ও ধানক্ষেত বরাদ্দ দেয় সরকার। তখন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ নূরুজ্জামান ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে জমি বরাদ্দের জন্য গণপূর্ত বিভাগে আবেদন করতে অনুরোধ করেন। নূরুজ্জামান একসময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেন। নূরুজ্জামানের অনুরোধে বঙ্গমাতা তাঁর নিজের নামে ধানমন্ডিতে এক বিঘা জমির জন্য আবেদন করেন। কারণ, শেখ মুজিবুরের নামে আবেদন করলে বরাদ্দ না পাওয়ার আশঙ্কা ছিল। পরে সরকার তৎকালীন ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে ধানমন্ডির ৬৭৭ নম্বর প্লটটি তাকে বরাদ্দ দেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রথম এক হাজার টাকা দিয়ে সেই জমির দখল বুঝে নেন।
১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে আবারও গ্রেপ্তার করা হলে বিপাকে পড়েন বঙ্গমাতা। তখন সন্তানদের নিয়ে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারে মোহাম্মদ হানিফের বাসায় আশ্রয় নেন তিনি। এরপর সেগুনবাগিচায় এক বিচারকের বাসা ভাড়া নেন ফজিলাতুন্নেছা। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বের হলে বরাদ্দ পাওয়া জায়গাটিতে বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নেন মুজিব দম্পতি। তখন সঞ্চয়ের কিছু টাকা, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার করা অর্থ ও হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ১৯৬০-৬১ সালে সেখানে বাড়ি গড়ে তোলেন তাঁরা।
প্রথমে নিচতলায় মাত্র দুটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ১৯৬১ সালের ৮ অক্টোবর ওই বাড়িতে ওঠের বঙ্গবন্ধু। দুটি কক্ষের একটিতে থাকতেন মুজিব দম্পতি এবং অন্য আরেকটি কক্ষে থাকতেন তাদের সন্তানেরা। পরবর্তীকালে একতলার বাড়িটিকে তিনতলা করতে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছিল বঙ্গমাতার।
বাড়িটি নির্মাণের সময় ওই সড়কের নম্বর ছিল ৩২। আর বাড়ি নম্বর ছিল ৬৭৭। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে ওই সড়ক ও বাড়িটির নম্বর পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ওই সড়কের নম্বর ১১ এবং বাড়ির নম্বর ১০। তবে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য এই বাড়িটি সকলের কাছে ৩২ নম্বর বাড়ি নামেই পরিচিত।
বাঙালির ভাগ্যবদলের ঘোষণা এসেছিল এই বাড়ি থেকে
১৯৬১ সালের অক্টোবর থেকে মৃত্যু আগ পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতেই বসবাস করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ও তিনি এই বাড়ি ছেড়ে সরকারি বাসভবনে ওঠেননি। তাই বাংলাদেশের জন্ম ও রাজনৈতিক পালাবদলের নানা ঘটনার সাক্ষী এই ৩২ নম্বর বাড়িটি।
এই বাড়িতে থেকেই ১৯৬২ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৬ সালে ডাক দিয়েছিলেন ছয় দফা আন্দোলনের। অংশ নিয়েছিলেন ১৯৭০-এর নির্বাচনে। ১৯৭১-এর অসহযোগ আন্দোলনেও বঙ্গবন্ধু যোগ দিয়েছিলেন এই বাড়িতে থেকে। এই বাড়িতে বসেই বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন তিনি, নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে নানা পরিকল্পনা করেছেন। এমনকি বাঙালির ভাগ্য বদলের ঘোষণাও এই বাড়ি থেকে দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে বসে রাত ১২টা ১ মিনিটে ট্রাঙ্ক কলের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নেমে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে। বুকের তাজা রক্ত উৎসর্গ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে আনে লাল-সবুজের পতাকা, স্বাধীন ভূখণ্ড।
৩২ নম্বর বাড়িতে সপরিবার নিহত হন বঙ্গবন্ধু
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাঙালি জাতির এক কালোতম অধ্যায়। ওই দিন শেষ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। অথচ বাঙালির মুক্তির সোপান তাঁর হাত ধরেই গড়া। শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, ওই দিন তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল খুকু ও পারভীন জামাল রোজীকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। সেই নৃশংসতার স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি। তবে দেশের বাইরে থাকায় সেদিন ভাগ্যক্রেমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ওই সময় তারা জার্মানিতে থাকায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে এসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটিকে বঙ্গব্ন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন তাঁরা।
যেভাবে জাদুঘরে রূপান্তরিত হয় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু দেশে ফেরার পর তাঁকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে উঠতে দেওয়া হয়নি। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাড়িটি সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে ছিল। তাই দেশে ফিরে বাড়ির সামনে পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া ও মিলাদ পড়ে ফিরে যেতে হয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে।
শেখ হাসিনা দেশে ফেরার কিছু দিন পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি নিলামে ওঠায় হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন। কারণ বঙ্গমাতা বাড়িটি নির্মাণের জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা শোধ করতে পারেননি। পরে নিলামে তৎকালীন ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করে ১৯৮১ সালের ১০ জুন বাড়িটি বুঝে নেন শেখ হাসিনা। বাড়ি বুঝে নেওয়ার পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্ধান্ত নেন বাড়িটিকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার। কারণ এই বাড়িতে বসেই বাঙালির মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। পরে ১৯৯৪ সালে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’র মাধ্যমে ৩২ নম্বর বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় ওই বছর ১৪ আগস্ট।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যা যা রয়েছে
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম, ছবি ও সেই সময়কার বিভিন্ন চিঠিপত্র। জাদুঘরে ঢুকতেই নিচ তলায় রয়েছে জাতির জনকের প্রতিকৃতি। সেখানকার একটি কক্ষে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের জন্ম ও রাজনৈতিক ইতিহাস। এছাড়া নিচ তলায় রয়েছে একটি পাঠাগার। এই কক্ষ থেকেই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
বাড়ির দোতলায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষ। এর উত্তর পাশে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্ষ। উত্তর পাশে রয়েছে শেখ রেহানার কক্ষ। এই কক্ষে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত আছে ওই ভয়াল রাতে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের জামাকাপড়, ব্যবহৃত জিনিপত্র, দুর্লভ কিছু ছবি, বঙ্গবন্ধুকে লেখা ও বঙ্গবন্ধুর লেখা চিঠি, ঘাতকদের বুলেট। দুর্লভ ছবির মধ্যে রয়েছে—বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া কফিনের ছবি, তাঁর সমাধির ছবি ও বনানী কবরস্থানে পরিবারের অন্যদের সমাধিস্থ করার ছবি। এই কক্ষের পশ্চিম দিকে যে কক্ষ রয়েছে সেখানে শেখ কামাল ও শেখ জামাল থাকতেন। তবে বিয়ের পর শেখ জামাল বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে এই কক্ষে থাকতেন এবং শেখ কামাল তার স্ত্রীসহ থাকতেন তিন তলার একটি কক্ষে। এই দুটি কক্ষে শেখ কামাল ও শেখ জামালের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও দুর্লভ কিছু ছবি রয়েছে।
বাড়িটির বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে এখনো ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন। রয়েছে গুলি ও রক্তের দাগ। নিচ তলা থেকে দোতলায় ওঠার সিড়িতে ব্ঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। সেখানে এখনো তাঁর রক্তের দাগ রয়েছে। এছাড়া দর্শনার্থীদের প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে— পারিবারিক টেলিভিশন, শেখ রাসেলের খেলার বল, হকস্টিক, ব্যাট, হেলমেট, সাইকেল, বঙ্গমাতার হাতে তৈরি আচারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
বাড়ির পেছন দিকে রয়েছে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের রান্নাঘর। যেখানে বড় বড় ডেকচি রয়েছে। তার পাশে রয়েছে কবুতরের খোপ।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর খোলা রাখা হয়। শুধু বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করতে পারবে দর্শনার্থীরা
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি একাধারে শহুরে ও গ্রামের বাড়ি বলে অবহিত করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু সবসময় গ্রামের সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য লড়াই করেছেন। তাদের কথা চিন্তা করেছেন। এই বাড়িটির পরতে পরতে সেই ছাপ রয়েছে।”
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, “এই বাড়িটি হচ্ছে বাঙালির সংগ্রামের প্রতীক, বাঙালির মুক্তির কেন্দ্রবিন্দু, বাঙালির স্বাধীনতার প্রতীক। এই বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। আবার এই বাড়িতেই দুই কন্যা ছাড়া সপরিবারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বঙ্গবন্ধু। এই বাড়িটি এখন জাদুঘর। পৃথিবীর মানুষ এসে এখানে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এখানে এসে দর্শনার্থীরা স্বাধীনতার সেই উত্তাল আন্দোলনের দিনগুলোর কথা ভেবে নেয়। এখানে এসেই দর্শনার্থীরা বঙ্গবন্ধুর কথা চোখ বুঝে অনুভব করে।”
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের পাঁচটি কাজ রয়েছে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, “প্রথম কাজটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যত তথ্য, নথি ও স্মৃতি রয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করা। দ্বিতীয়ত, সেসব তথ্য, নথি, স্মৃতি সংরক্ষণ করা। তৃতীয়ত, সংগৃহীত তথ্য সম্পর্কে গবেষণা করা। চতুর্থত, সংগৃহীত তথ্য, নথি, স্মৃতি ও গবেষণার ফলাফল প্রদর্শন করা। শেষ কাজটি হচ্ছে, প্রচার করা।”
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে একটি পাঠাগার আছে, যেখানে যে কেউ এসে বাংলাদেশের সৃষ্টি, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে জানতে পারবে বলে জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব। বাংলাদেশ যত কাল থাকবে, তত কাল বঙ্গবন্ধুর অবদান মানুষ মনে রাখবে। তাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর হতে পেরে আমি গর্বিত।”