• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মামলাজট থেকে মুক্তিতে যুদ্ধ ঘোষণা প্রধান বিচারপতির


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২২, ০৭:৩১ পিএম
মামলাজট থেকে মুক্তিতে যুদ্ধ ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

দেশের বিচার বিভাগকে মামলাজট থেকে মুক্তি পেতে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সেইসঙ্গে বিচার বিভাগ নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

রোববার (২ জানুয়ারি) দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়া হাসান ফয়েজ তার প্রথম কর্মদিবসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তাকে এই সংবর্ধনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।

এ সময় অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র ১ হাজার ৯০০ জন বিচারকের কাঁধে যে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্হায় রয়েছে। যা কোনোভাবেই বিচার বিভাগের জন্য সুখকর নয়।”

গত তিন দিন আগেই এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, দেশের আদালতে বর্তমানে ৩৯ লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে।

সেই মামলা জট নিরসনের উপর জোর দিয়ে হাসান ফয়েজ বলেন, “আমার দায়িত্বভার গ্রহণের সূচনালগ্নে সকল স্তরের বিজ্ঞ বিচারকদের আহ্বান জানাব, আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। এটিই হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলার জট থেকে মুক্তির যুদ্ধ ঘোষণা।”

এ সময় দিয়ে মামলা জট নিরসনে নিজের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।

হাসান ফয়েজ বলেন, “অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসনে আটটি বিভাগের জন্য হাই কোর্ট বিচাগের একজন করে বিচারপতিকে প্রধান করে আটটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। তিনি প্রতি মাসে প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেবেন।”

এছাড়া বিচার বিভাগের গঠনমূলক সমালোচনাকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, “সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার কোনো অশুভ ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা কখনই মেনে নেওয়া হবে না। আমি উদার চিত্তে বিচার বিভাগকে নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। এছাড়া কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই, ‘নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়’। আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক বন্ধু রয়েছেন, তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন। নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকামিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে।”

এদিকে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আইন সভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বিত কাজের উপরও জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটি অঙ্গ যদি দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হয়, তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।”

এর আগে আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচার কক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। রীতি অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

Link copied!