জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং তেলের দামের সঙ্গে ভাড়ার সমন্বয়ের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে গণপরিবহন ‘ধর্মঘট’। সড়কের কোথাও নেই বাস কিংবা মিনিবাস। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে নিরুপায় যাত্রীদের ভরসা শুধু লাল রঙের বিআরটিসির দোতলা বাস।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বেসরকারি গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাস্তায় চলাচল করছে বিআরটিসির বাস। সংখ্যায় কম হওয়ায়, দীর্ঘসময় পরপর দেখা মিলছে সরকারি এই বাসের। তবে সব বাসই যাত্রীতে ঠাসা। এরপরও বাস স্টপগুলোতে বিআরটিসির বাস এসে দাঁড়ানো মাত্রই অপেক্ষমান যাত্রীরা ছুটে যাচ্ছেন গেটের কাছে। ভিড় ঠেলে কেউ কেউ উঠতে পারলেও অধিকাংশকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার যারা উঠতে পারছেন, তারাও সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে।
শ্যামলীতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বিআরটিসির একটি বাসে উঠতে পেরেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, “দীর্ঘ দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে একটি দোতলা বাসে উঠতে পেরেছি। তাও যেন স্বস্তি। রাস্তায় তো আর কোনো গাড়ি নেই। সরকারের উচিত বেসরকারি গণপরিবহন বন্ধ করে শুধু বিআরটিসির বাস চালু করা। তাহলেই বেসরকারি পরিবহনগুলোর এমন তামাশা বন্ধ হবে। সাধারণ যাত্রীদেরও আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।”
অসুস্থ নাতনীকে দেখতে মিরপুর যাচ্ছেন বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় দীর্ঘক্ষণ শ্যামলীতেই অপেক্ষা করতে হয় তাকে। নজরুল ইসলাম বলেন, “বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় কোনো বাস নেই। মাঝে মাঝে দুই-একটা বিআরটিসির বাস আসছে। কিন্তু সেগুলোতে এতই ভিড় যে, এই বৃদ্ধ শরীর নিয়ে উঠতে পারছি না।”
নজরুল ইসলাম আরো বলেন, “জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির মতো এমন অযৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার জনগণের মতামত নেয়নি। কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর আগে সরকার বিবেচনা করে না যে, এটা জনগণের সহনীয় পর্যায়ে থাকবে কিনা। প্রতিটি পণ্যের দাম এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এদেশে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের আর বাঁচার অধিকার নেই। সরকারের উচিত দ্রুত বাজার মনিটরিং করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা।”
বিআরটিসির বাসই এখন একমাত্র ভরসা বলে জানান শামীম হোসেন নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, “হঠাৎ করে এমন তেলের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এমনিতেই নিত্যপন্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে, এর সঙ্গে এখন এলপিজি গ্যাসের দাম এবং জ্বালানি দাম বাড়িয়ে সাধারণ জনগনকে ভোগান্তিতে ফেলেছে সরকার।”
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি বাসের সংখ্যা বাড়লে বেসরকারি পরিবহন মালিক শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা যেমন কমবে, তেমনি আয় বাড়বে সরকারের।”
বুধবার (৩ অক্টোবর) হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হলেও এর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি ভাড়া। তাই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ও ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস, ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান মালিক ও শ্রমিকদের সমিতি। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে এই ধর্মঘট শুরু হয়।