রাজধানীর বুড়িগঙ্গায় আতঙ্কের আরেক নাম হয়ে উঠেছে সাকার ফিশ। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী এই ক্ষতিকর মাছটি এখন হর হামেশাই দেখা মিলছে।
অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশী প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি কীভাবে বুড়িগঙ্গা নদীতে এসেছে সে তথ্য দিতে পারছেন না কেউ। মাছটির প্রকৃত নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। সাকার ফিশ নামেই এটি বেশ পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। সাকার ফিশ জলজ পোকামাড়ক ও শেওলার পাশাপাশি দেশীয় ছোট মাছ এবং মাছের পোনা খেয়ে থাকে।
তাছাড়া সাকার ফিশের পাখা খুব ধারালো। ফলে লড়াই করার সময় ধারালো পাখার আঘাতে সহজেই অন্য মাছের দেহে ক্ষত তৈরি হয় এবং পরে পচন ধরে সেগুলো মারা যায়। সাকার ফিস রাক্ষুসে প্রজাতির না হলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার খায়। এতে খাদ্যের যোগান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় অন্য মাছের সঙ্গে। বেশিভাগ সময়ই দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকার ফিশের প্রভাবে মায়ানমার ও আরব আমিরাতের মৎস্য চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে উপকূলীয় জেলা অঞ্চলে প্রথম এই মাছের দেখা মিলে। তাছাড়া এখন সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরের মতো জায়গায় যা উপকূল থেকে অনেক দূরে, সেখানেও দেখা মিলছে এই মাছের। আরও জানা যায়, বাংলাদেশের প্রজাতির সাকার ফিশ ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। মাছটি পানি ছাড়া প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ ধরতে আসা আব্দুর কায়েম বলেন, “আগে প্রত্যেক খেওয়ে দেড় কেজি দুই কেজি শিং মাছ উঠতো জালে। এখন আর শিং মাছ উঠে না উঠে সাকার। এ মাছের কারণে আমাদের দেশের মাছ আজ হুমকির মুখে পড়ছে বলে জানা এই জেলে।”
কেরানীগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, “সাকার সহজেই নতুন পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে বংশ বিস্তার করতে সক্ষম। অনেকে শুরুর দিকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে পালন করলেও পরে মাছটি বড় হয়ে গেলে তখন ডোবায় ছেড়ে দেয়।”
তিনি আরো বলেন, “মাছটি নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে বংশ বিস্তার করতে পারে। মাছটি ভক্ষণে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা হয়নি। সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে এবং গবেষণা মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে।”