ঝিনাইদহের একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অপহরণের শিকার হন। এ ঘটনায় মূলহোতা গাফফারসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অপহৃত ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়। মূলত সেই কিশোরীকে বিয়েতে বাধ্য করানোর জন্যই এই অপহরণ করা হয়েছে।
সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “শনিবার (৫ মার্চ) বিকেলে ভুক্তভোগী ও তার এক সহপাঠী প্রাইভেট শেষে রিকশা দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় শৈলকুপার একটি রাস্তা হতে ওই শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।”
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, “ওই ছাত্রীর পাশে দাঁড়ায় তার সহপাঠীরা। ঝিনাইদহ শহরব্যাপী সারাদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ করে অবস্থান করে। দেশের প্রথম সারির মিডিয়াতে গুরুত্বের সঙ্গে এই হৃদয় বিদারক মর্মান্তিক এই ঘটনা প্রচার ও প্রকাশিত হয়। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিতার আর্তনাদ শিরোনামে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে একটি সামাজিক আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়। ফলে র্যাব উক্ত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।”
এরই ধারাবাহিকতায় আজ (সোমবার) ভোরে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৪ ও র্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা হতে অপহরণ মামলার প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী আবু জার গিফারী গাফ্ফারসহ (৩৫) তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার গাফ্ফারের বাবার নাম মো. দিয়ামত আলী বিশ্বাস। আর বাকিরা হলেন শৈলকুপা উপজেলার মো. সাজ্জাদ হোসেনের ছেলে সাব্বির হোসেন (২২) ও রাজবাড়ী সদরের আবুল হোসেন প্রামাণিকের ছেলে হাফিজুর রহমান (৪৬)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক কৌটা এসিড সদৃশ্য বস্তু, ৩টি দেশিয় ধারালো অস্ত্র ও মোবাইল ফোন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত গাফ্ফার অপহরণ সম্পর্কে জানায় যে, চলতি বছরের এসএসসিতে ভিকটিম ওই কিশোরি খুব ভালো ফলাফল করায় গাফফারের ধারণা ছিল ভিকটিম তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এ কারণেই সে কিশোরিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুই দিন পূর্বে ঝিনাইদহ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় অপহরণকারী গাফফার তার সঙ্গীদের নিয়ে অপহরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে।”
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেপ্তারকৃত ভিকটিমকে প্রাইভেট পড়া থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা হতে অপহরণ করে। অপহরণ পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য সে ভিকটিমকে প্রথমে রাজবাড়ীতে তার এক নিকট আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তার দুইজন সহযোগীকে পরিবর্তন করে নতুন আরও দুজন সহযোগীসহ ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেখানে আশ্রয় না পেয়ে তৎক্ষণাৎ মাইক্রোবাসযোগে ভিকটিমকে সিলেটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পুনরায় ওই কিশোরিকে নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পথিমধ্যে গ্রেপ্তার গাফ্ফার ভিকটিমকে এসিড এবং দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে যাতে ভিকটিম কোন প্রকার চিৎকার বা আওয়াজ না করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ হতে ভিকটিমকে উদ্ধার ও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় নানাবিধ অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।