বিশিষ্টজনদের সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠক শেষ করেছে সার্চ কমিটি। এই বৈঠকে যারা আগের সরকারের সুবিধাভোগী তারা যেন ইসিতে সুযোগ না পান সে বিষয়টি বিশেষভাবে দেখার আহ্বান জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা সবাই কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের সবারই বক্তব্য ছিল, নির্বাচন কমিশনে যারা সুযোগ পাবেন তারা যেন পূর্বে কোনো সরকারের আমলে বিশেষ সুবিধাভোগী না হন।”
এছাড়া রাজনৈতিক সুবিধাপ্রাপ্ত কেউ যেন নির্বাচন কমিশনে সুযোগ না পান সেই বিষয়টি সার্চ কমিটিকে জানানো হয়েছে বলে জানান ড. আসিফ।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে আয়োজিত সার্চ কমিটির সঙ্গে বিশিষ্ট নাগরিকদের বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, “যেমন আপনারা জানেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে, চাকরির সময় বৃদ্ধির মাধ্যমে বিভিন্ন সরকার অনেক সময় অনেকের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে এবং যারা রিটায়ার্ডের পর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়েছে, এ ধরনের লোকেরা যেন নির্বাচন কমিশনে না আসেন। যারা নির্বাচন কমিশনে আসবেন, তাদের যেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার মানসিকতা, সাহস ও ব্যক্তিত্ব থাকে।”
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয়েছে সার্চ কমিটি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। কিন্তু কতটুকু রাখবে সেটা নাম প্রকাশের পর আমরা বুঝতে পারবো।”
কোনো নাম দিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে কোনো নাম দেওয়া হয়নি। আমরা শুধু বলেছি কীসের ভিত্তিতে লোকদের নেওয়া উচিৎ আর কীসের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত না।”
এদিকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’- অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রথম ধাপে বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি।
এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষ হয় ১২টা ৩৭ মিনিটে। তবে বৈঠকে ২০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত হন ১৪ জন।
এরপর দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ১১ বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের নিয়ে দ্বিতীয় সেশনের বৈঠক শুরু হয়।
সার্চ কমিটির সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈঠকে অংশ নিতে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, একাত্তরের টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল হক বাবু, প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, এনটিভির হেড অফ নিউজ জহিরুল আলম, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক আবেদ খান।
বিশিষ্ট গণমাধ্যম থেকে আমন্ত্রণ পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন : দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ, জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইসি নিয়োগের জন্য মোট ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীর সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি। আলাপ-আলোচনা শেষে যোগ্যতাসম্পন্ন ১০ ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে সুপারিশ করবে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওই ১০টি নাম থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগ চূড়ান্ত করবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সম্প্রতি একটি আইন পাশ করেছে জাতীয় সংসদ। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওয়ায়দুল হাসান।