তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেছেন, “ঐক্যহীন বিএনপির মুখে সরকার পতনের ডাক মানায় না।”
তিনি বলেন, “যারা নিজেরা ঐক্য ধরে রাখতে পারে না, তারা আবার সরকার পতনের ডাক দেয়! বিএনপি আগেও জাতীয় ঐক্য করেছিল, কিন্তু টেকেনি। এখন আবার ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের কথা বলছে, অথচ তাদের নিজেদের মধ্যেই ঐক্য নেই।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। বিএনপি মাঠে-ময়দানে নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে বর্ষাকালে চারিদিক যখন তলিয়ে যায় তখন ব্যাঙ ডাকে। বিএনপির বক্তব্য বর্ষাকালের ব্যাঙ ডাকার মতোই। তারা সমাবেশ করতে পারে না। সমাবেশের নামে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে।”
ড. হাছান বলেন, ‘আসলে বিএনপি’র মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে, কারণ তারা দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। নয়াপল্টনের অফিসে বসে প্রতিদিন আওয়ামী লীগের বিদায় ঘণ্টা বাজায় কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। আসলে তারা নিজেরাই নিজেদের বিদায় ঘন্টা বাজাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নয়। তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, কারণ ১৩ বছরে দেশটা বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের এই উন্নয়নে দিশেহারা হয়ে বিএনপি নেতারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা বুঝে গেছেন, বিএনপির বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আর এই উন্নয়নের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে।
বিএনপি নেতারা বলেন দেশের মানুষ সুখে নেই আর জাতিসংঘ বলে সুখের সূচকে বাংলাদেশ সাত ধাপ এগিয়েছে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, “আসলে বিএনপির কাজ মিথ্যাচার, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। কিন্তু তাদের কথায় কেউ সাড়া দেয় না। তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ পদ্মাসেতু করতে পারবে না। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও হয়েছে, সুন্দরবনেরও কোনো ক্ষতি হয় নাই। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেও পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না। যারা এসব নিয়ে অপপ্রচার চালায় তারা উন্নয়ন চায় না।”
ড. হাছান বলেন, “পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির মন্তব্যের পর এখন বানরও ভেংচি কাটে। তারা বলেছিল, পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু পদ্মা সেতু এখন হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি চালিয়ে এর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পাড়ি দিয়েছেন। তাই পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের তওবা পড়া উচিত।”
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, “সরকার এ পর্যন্ত যেসব উন্নয়ন করেছে তাতে নৌকা বাদে অন্য কোথাও ভোট যাওয়ার কথা নয়। যদি যায়, বুঝতে হবে নেতাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে মানুষ ভোট দেয়নি। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ আমরা দেখতে চাই না। এদের কারণে দেশের উন্নয়নে ভাটা পড়তে দিতে পারি না।”
নেতৃত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হাত গুটিয়ে থাকা ও দলের সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা মানুষদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকার কোনো অধিকার নেই। দলেও তাদের দরকার নেই। যারা টাকা দিয়ে নেতা হতে চায় তাদের প্রয়োজন নেই।’ দ্রব্যমূল্য বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানীং কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, এটি সারা পৃথিবীতেই বেড়েছে। আমাদের দেশেও কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম। তবুও আমাদের প্রধানমন্ত্রী এক কোটি পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, এটি অব্যাহত থাকবে যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়।”
দূর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার সম্মেলন উদ্বোধন করেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা প্রধান বক্তা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বেগম আখতার জাহান, রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং রাজশাহী মহানগর, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।