জাতীয় সংসদের চলতি বছরের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলমান একাদশ সংসদের ষোড়শ অধিবেশন শুরু হয়।
নিয়মানুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংসদে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সাধারণত বছরের প্রথম অধিবেশন দীর্ঘ হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর সংসদ সদস্যরা অধিবেশন জুড়ে ওই ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। বছরের শুরুর অধিবেশন ৩০ কার্যদিবস চলারও রেকর্ড আছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এই অধিবেশন ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে পারে বলে জানিয়েছেন সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।
সাধারণত কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ঠিক করা হয়। তবে মহামারির কারণে কোনো অধিবেশনের আগে ওই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার প্রথমে সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন করেন। এবার অধিবেশনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন—আব্দুল শহীদ, এবি তাজুল ইসলাম, মনজুর হোসেন, মুজিবুল হক চুন্নু, পারভীন হক সিকদার। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে এদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।
সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়নের পর স্পিকার শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সাবেক সংসদ সদস্য আফসার উদ্দিন আহমদ খান, জয়নাল আবেদীন হাজারী, মোহাম্মদ হানিফ, সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ভাষা সৈনিক গোলাম হাসনায়েন নান্নু, সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ, মো. আহাদ মিয়া এবং শাহাদত হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারী এস কে আবদুল হাইয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নেতা আফজাল খান, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক শহীদজায়া মুশতারী শফী, সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদার মা ছকিনা বেগম, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত, মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনা, ভারতের তামিলনাড়ুর কুন্নুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়।
শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর এক মিনিট নীরবতা পালন এবং মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মহামারিকালের অন্য অধিবেশনের মতো এবারও সীমিতসংখ্যক সংসদ সদস্য অংশ নেন। প্রথম দিন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া সংসদ সদস্যরা অংশ নিয়েছেন। এরপর প্রতি কার্যদিবসে সর্বোচ্চ ৯০ জনকে পর্যায়ক্রমে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মরতদেরও অধিবেশন চলার সময় সংসদ ভবনে প্রবেশ সীমিত থাকে। মহামারিকালের অন্য অধিবেশনগুলোর মতো একমাত্র দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সংসদে ঢুকতে পারেন। তবে এবার সেই সংখ্যাও কমানো হয়। সংসদ কক্ষের কর্মচারীর সংখ্যাও কমানো হয়েছে। সংসদ অধিবেশনের সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা শুধু রোববার সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে পারেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় সংসদ ভবনে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন সাংবাদিকরা। এজন্য প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থেকে একজন প্রতিবেদককে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানো হয়েছে। এরপর সংসদ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে বলা হয়।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ছাড়াও অধিবেশনে কয়েকটি বিল উত্থাপন ও পাসের কথা রয়েছে বলে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান।