ভারতীয় জাল রুপি পাচারকারী আন্তর্জাতিক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। চক্রটি পাকিস্তান থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে এসব জাল রুপি বাংলাদেশে এনে স্থল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করত।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
এর আগে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ও মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ডেমরা ও হাজারীবাগে অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক এই পাচার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় আটটি মোবাইল ফোন ও ১৫ লাখ ভারতীয় জাল সুপার নোট।
গ্রেপ্তাররা হলেন আমানুল্লাহ ভূঁইয়া (৫২), তার স্ত্রী কাজল রেখা (৩৭), ইয়াসিন আলাফাত কেরামত (৩৩) ও নোমানুর রহমান খান (৩১)।
অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় ৭ কোটি ৩৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপি পাচারসংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাটি তদন্তের ভার দেওয়া হয় ডিবির গুলশান বিভাগকে। তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় জাল নোট পাচারকারী চক্রের সদস্য নোমানকে।
ডিবি প্রধান আরও জানান, গ্রেপ্তার নোমান জানায়, তার ভাই মো. ফজলুর রহমান ওরফে ফরিদ পাকিস্তানে অবস্থান করে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর আড়ালে আকাশ ও সমুদ্রপথে ভারতীয় জাল রুপি বাংলাদেশে পাঠাত। সাম্প্রতিক সময়ে পাচারকৃত এসব জাল রুপির একটি বড় চালান জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে সময় তার ভাই সাইদুর রহমান, ইম্পোর্টার তালেব, সমন্বয়কারী ফাতেমা আক্তার ও অন্যান্যরা গ্রেপ্তার হয়। জাল রুপি পাচারকারী চক্রের এই অংশকে গ্রেপ্তার করা হলেও আরেকটি অংশ হাজারীবাগে অবস্থান করে।
গ্রেপ্তার নোমানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার হাজারীবাগের ২১ নম্ব মনেশ্বর রোডে অভিযান চালিয়ে ইয়াসিন ও আমান উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে ডেমরায় অভিযান চালিয়ে কাজল রেখাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তিনজনের কাছ থেকে মোট ১৫ লাখ ভারতীয় জাল রুপির সুপার নোট জব্দ করা হয় বলে জানান এ কে এম হাফিজ আক্তার।
গ্রেপ্তাররা কৌশলে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে বা ব্যক্তি ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা দিয়ে ভারতে জাল রুপি পাচার করে আসছিল বলে জানান এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই ভারতীয় জাল রুপি পাচারকারী চক্রে কেন্দ্র আছে মূলত দুটি পরিবার। এর মধ্যে একটি পরিবার মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানায় বসবাস করত। তার একসময় পাকিস্তানেও ছিল। বর্তমানে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য ফজলুর রহমান পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান করে সেই দেশের মাফিয়াদের কাছ থেকে উন্নত মানের জাল রুপি সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠাত।
ডিবি প্রধান আরও জানান, এসব ভারতীয় জাল রুপি কখনো শুঁটকি মাছ, কখনো মোজাইক পাথর ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর বস্তার মাধ্যমে পাকিস্তানের করাচি থকে সমুদ্রপথে শ্রীলঙ্কা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসত। এই কাজে ফজলুর রহমানকে বাংলাদেশে সহযোগিতা করত তার ভাই সাইদুর রহমান, নোমান এবং ভগ্নিপতি শফিকুর রহমান। চট্টগ্রাম বন্দরে সেসব জাল রুপি খালাসের পর গোউডাউনে মজুদ করে রাখা হতো। পরে সেগুলো বিভিন্ন ডিলারের মাধ্যমে ডিসট্রিবিউশন করা হতো। এরপর বিক্রি হওয়া জাল রুপির অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে পাকিস্তানে পাচার করা হতো।
গ্রেপ্তার আমান উল্লাহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সরকারি গাড়ির চালক ছিলেন। কাজল রেখা তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তাদের প্রত্যেকের নামে হাজারীবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।