খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি এটাই তার জন্য অনেক কিছু বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সফর নিয়ে বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়? আপনাকে যদি কেউ হত্যার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন?”
শেখ হাসিনা বলেন, “গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া বলল, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। কোটালিপাড়ায় বোমা যখন পোঁতে, এর আগে তার বক্তব্য কী ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “খালেদা জিয়া ভেবেছিল মরেই তো যাব। রাখে আল্লাহ, মারে কে; মারে আল্লাহ, রাখে কে? আমার বেলায় হচ্ছে, রাখে আল্লাহ, মারে কে। তারপরও আবার খালেদা জিয়ার জন্য এত দয়া দেখাতে বলেন? কেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় অন্তত একটু লজ্জা হওয়া উচিত।”
শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, কপ২৬ সম্মেলনে ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা গৃহীত হওয়া বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের ফলাফল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি ৪৮টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের দ্বারা ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা গৃহীত হওয়া জলবায়ু কূটনীতিতে আমাদের দেশের অগ্রণী ভূমিকার ফল।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, কপ২৬-এর প্রধান কৃতিত্ব হল বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা প্যারিস চুক্তি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দসহ জলবায়ু তহবিল প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন। বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সকল ধরনের অরণ্য নিধন রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে তাকে কপ২৬-এর পাঁচজন চুক্তি প্রস্তুতকারীর একজন হিসাবে নির্বাচিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একে আমি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন আমাদের নৈতিক পররাষ্ট্র নীতির প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা হিসেবে বিবেচনা করে সম্মানিত বোধ করি।”
সফরের বিস্তারিত অবহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কপ-২৬ সম্মেলনের মূল অংশ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলন এবং সাইড ইভেন্ট মিলিয়ে দুই দিনে তিনি ৬টি বহুপাক্ষিক সভা ও ৫টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে ১৯টি ‘ক্যু’ হয়েছিল। এরপর ১৯৭৭ সালে পুনরায় যে ‘ক্যু’ হয়, তাতে শত শত মানুষকে সেদিন নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে তখন জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিলেন। তার (জিয়া) নির্দেশেই নির্বিচারে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৭ সালের ‘ক্যু’র সঙ্গে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিলেন। পরে তার (জিয়া) নির্দেশে কারগারে মার্শাল কোর্ট বসিয়ে বিচারের নামে সেদিন বহু মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল।”
এ সময় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ধন্যবাদ, এত বছর পরও যে এই বিষয়টা আবারও আপনাদের ভাবনায় এসেছে।”
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে জানান তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রী গত ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত গ্লাসগো, লন্ডন ও প্যারিসে সরকারি সফরকালে কপ২৬ সম্মেলন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১, ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলন, প্যারিস শান্তি ফোরাম, ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।